ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক সাবেক ওসি সোহেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১০ পিএম, ১৭ মে ২০২৩

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক শেখ সোহেল রানা। তিনি আবার রাজধানীর বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছিলেন। গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের দায়ে করা পাঁচ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ পরোয়ানা জারি করেন।

জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান রাজধানীর গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আসার পর আদালত তা আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

যেসব মামলায় সোহেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় মো রাসেল নামের একজন বাদী হয়ে প্রতারণার মামলা করেন। সেই মামলায় সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় ২০২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

আরও পড়ুন: ই-অরেঞ্জের সোহেলকে এক বছরেও ভারত থেকে ফেরানো যায়নি

এরপর একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় ফজলে রাব্বি নামে আরও একজন প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন। এ মামলায় সোহেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পলাতক থাকায় ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

অপরদিকে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় এস এম রিফাত হোসেন বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায়ও সোহেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

এছাড়া ২০২১ সালের ২ অক্টোবর গুলশান থানায় মেহেদী আদনান নামের একজন বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। এ মামলায়ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। পলাতক থাকায় ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় সোহেলের বিরুদ্ধে। এছাড়া আরও একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

আরও পড়ুন: টাকা চাইলে ই-অরেঞ্জ গ্রাহকদের হুমকি দিতেন পুলিশ পরিদর্শক সোহেল

এদিকে সোহেল রানার বিরুদ্ধে এভাবে বিভিন্ন মামলা হতে থাকলে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে ভারত চলে যান। পরে ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাকে আটক করে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সেখানে তার তিন বছরের জেল হয়। পরে ৫ সেপ্টেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ।

ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২৭টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। একটি মানিলন্ডারিং, দুটি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে এবং বাকিগুলো প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন ই–অরেঞ্জের মূল মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, মালিক বীথি আকতার, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ এবং সাবেক সিও নাজমুল রাসেল।

আরও পড়ুন: ভাই-চাচাকে নিয়ে ই-অরেঞ্জ থেকে ১৮ কোটি টাকা সরিয়েছেন সোনিয়া

এদের মধ্যে সোহেল রানা, বীথি আকতার ও কাওসার পলাতক। নাজমুল রাসেল গত ফেব্রুয়ারি জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হন। অধিকাংশ প্রতারণা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থপাচারের মামলা এখনও তদন্ত করছে সিআইডি।

অধিকাংশ অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, সোহেল রানাসহ অন্যান্য আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে প্রতারণার উদ্দেশে ই-অরেঞ্জ শপ নামক অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সেলিব্রেটিদের দিয়ে বিজ্ঞাপন দেন। এছাড়া বিশাল ডিসকাউন্টে পণ্য বিক্রি ও ভাউচার বিক্রির অফার দিয়ে বাদী ও সাক্ষীদের কাছ থেকে নেন ৩৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৮ টাকা। কোম্পানির ওয়াদা মোতাবেক কোনো পণ্যের মূল টাকা ফেরত আনতে কোম্পানির অফিসে গেলে গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেন আসামিরা। এর মাধ্যমে পেনাল কোডের ৪২০/৪০৬/৫০৬/১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন তারা। পরবর্তীতে তিনি পলাতক থাকায় এ মামলায় তার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

ক্ষমতার অপব্যবহার করেন সোহেল রানা

গালিব নামে এক গ্রাহকের করা মামলায় সোহেল রানা, প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্লাহ ও কাওছার আহম্মেদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক জেহাদ হোসেন।

আরও পড়ুন: ই-অরেঞ্জের সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ জানতে চান হাইকোর্ট

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৬/৪২০/৫০৬/১০৯ ধারায় অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থানায় মামলাটি করেছিলেন গালিব।

মামলার অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, এজহারনামীয় আসামি শেখ সোহেল রানা ও সোনিয়া মেহজাবিন আপন ভাই-বোন। সোহেল রানা বাংলাদেশ পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক পদের একজন কর্মকর্তা। তিনি সবশেষ বনানী থানায় ওসি (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সোহেল রানা তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিধি বহির্ভূতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার জন্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে ই-অরেঞ্জ শপ কোম্পানিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। পণ্য না পেয়ে টাকা চাইলে গ্রাহকদের হুমকি দিতেন ও ভয়ভীতি দেখাতেন সোহেল রানা।

দুই কোটি ৫৮ লাখ ২২ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলা

দুই কোটি ৫৮ লাখ ২২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থানায় সোনিয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাহফুজ নামে এক গ্রাহক। এরপর সোনিয়া ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান, সোহেল রানা, আমান উল্লাহ চৌধুরী, জায়েদুল ফিরোজ, বিথি আক্তার ও নাজমুল আল রাসেলের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪০৬/৪২০/৫০৬/৩৪ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

ভারতে আটক সোহেল রানা

শেখ সোহেল রানাকে ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিএসএফ পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে আটক করে। পরের দিন তাকে কোচবিহারের আদালতে হাজির করা হলে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বর্তমানে তিনি ভারতের কারাগারে রয়েছেন।

জেএ/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।