ড. তাহের হত্যা

আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ড বহালের পর রিট, আদালত অবমাননার সামিল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩৯ এএম, ০৯ মে ২০২৩
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তিতে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল আছে। এরপরও ফাঁসির দুই আসামির দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি আদালত অবমাননার সামিল বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।

সোমবার (৮ মে) তিনি তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এ মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, আপিল বিভাগ ফাঁসি বহাল রাখার পরও তাদের হাইকোর্টে রিট করা, আদালতকে একরকম অসম্মান করা।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখন আর তাদের কিছুই করণীয় নেই। শুধু তারা এতটুকু করতে পারে যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা।

এর আগে দুই আসামির একজনের ভাই ও অপরজনের স্ত্রী ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

তাদের আইনজীবী মো. তাজুল ইসলাম জানান, আসামিদের আটক, গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটেছে। তাই এক আসামির বড় ভাই ও আরেক আসামির স্ত্রী পৃথক রিট আবেদন করেছেন। রিটে ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চাওয়া হয়েছে।

এর আগে, ২ মে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করা হয়। আইন অনুযায়ী এখন রায়টি বিচারিক আদালত হয়ে কারাগারে যাবে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারবেন।

৩ মে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছিলেন, এখন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। সেটা খারিজ হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।

ড. তাহেরর মেয়ে আইনজীবী সেগুফতা তাবাসুম আহমেদ জানান, ‌‌‘রিভিউ খারিজের রায় হাতে পেয়েছি। এটা একটা আশার আলো। এখন আশা করছি অতি দ্রুত কার্যকর হবে।’

এর আগে, গত ২ মার্চ প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আট বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রিভিউ খারিজ করে দেন। ফলে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে ফাঁসির কাষ্ঠে যেতেই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তবে তার আগে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। আর যথারীতি যাবজ্জীবন দণ্ডিতদের সাজাভোগ করতে হবে।

আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী ও নিখিল কুমার সাহা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোলে পাওয়া যায় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাত পরিচয়ে কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চার জনকে ফাঁসির আদেশ ও দুই জনকে খালাস দেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।

খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।

২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।

শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।

ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম।

এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বাড়াতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘আসামিদের স্বীকারোক্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হত্যার এ ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধুমাত্র প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল, ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব না।’

আমাদের এটাও বলতে দ্বিধা নেই যে, আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আব্দুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন।

১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম এবং যাবজ্জীবন দণ্ডিত সালাম রিভিউ আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রিভিউয়ের ওপর শুনানি শুরু হয়। এরপর শেষ হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি। আর রায় হয় ২ মার্চ।

এফএইচ/এসএনআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।