পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ
বিএনপির হামলায় আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবী গুরুতর আহত
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে আবারও বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, ধাক্কাধাক্কি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।
এতে আওয়ামী লীগপন্থি সিনিয়র আইনজীবী মো. আতাউর রহমান গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়েছেন।
বুধবার (৩ মে) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে দুই পক্ষের আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পরস্পরবিরোধী স্লোগান দেন। এ সময় ধাক্কাধাক্কি ও হট্টগোল হয় বলে জানা গেছে।
সেসময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ময়লার ঝুড়ি ছুড়ে মারেন বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বলেন, আমরা নই, আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরাই হামলা চালিয়েছেন।
দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভকালে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ‘ভোট চোর, ভোট চোর’ স্লোগান দেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরাও ‘ব্যালট পেপার ছিনতাইকারী’ বলে পাল্টা স্লোগান দেন।
দুপুর দেড়টার দিকে দুই পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগানের এক পর্যায়ে ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি হট্টগোলে রূপ নেয়। এতে ওই সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকজন আইনজীবী অহত হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুপুর দেড়টার দিকে সমিতির সামনের চত্বরে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা স্লোগান দেন। সেসময় আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে শান্তি সমাবেশ করেন।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হামলায় আতাউর রহমান নামের একজন সিনিয়র আইনজীবী আহত হয়েছেন। আরও বেশ কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়েছেন। তবে, আতাউর রহতমান গুরুত্বর আহত হন।
তিনি জানান, এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা কিছু করি না করি যিনি আহত হয়েছেন তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল প্রশ্ন তুলে বলেন, এর নাম কি গণতান্ত্রিক আন্দোলন? এর নাম কিন্তু গণতান্ত্রিক আন্দোলন না। এর নাম সহিংসতা, এর নাম গণতন্ত্র না।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে দাবি করে আব্দুন নুর দুলাল বলেন, সহিংসতা বেশি উসকে দিয়েছেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। ঘটনার বিষয়ে সবাই বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি।
তবে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবী ও বারের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলালের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল। জাগো নিউজকে সজল বলেন, উনি (আব্দুন নুর দুলাল) তো একজন বিবেক সম্পন্ন মানুষ না।আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করেছি, প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি।
কামরুল ইসলাম সজল বলেন, আমরা যখন মিছিল নিয়ে দোতলা দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তারা আমাদের ওপর হামলা করেন। হামলা তো আমরা করিনি, তারাই করেছেন। ভিডিও ফুটেজ দেখুক হামলা কারা করেছে, তা হলেই হবে।
এদিকে, ‘ভোট ডাকাতি ও আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে’ বুধবার আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও সাধারণ সদস্যদের তলবি সভায় গঠিত এডহক কমিটির নেতারা। পাশাপাশি ১৫ ও ১৬ মর্চ সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে এবং সমিতির অফিস দখলমুক্ত করতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে এসসিবিএ সংবিধান সংরক্ষণ কমিটি। দুপুর ১টায় সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে মানববন্ধন শেষে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও এডহক কমিটির নেতারা বিক্ষোভে অংশ নেন।
এতে অংশ নেন আইনজীবী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী আবেদ রাজা, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা শান্তি সমাবেশ করেন। এতে সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, জেসমিন সুলতানা, গিয়াস উদ্দিন আহম্মদ, আইনজীবী এ কে এম তৌহিদুর রহমান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মো. মাহমুদুল করিম (রতন), আইনজীবী চৈতালী চক্রবর্তীসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ছিলেন।
এছাড়া এডহক কমিটি ও সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির নেতা শাহ আহমেদ বাদল, সৈয়দ মামুন মাহবুব, এ বি এম রফিকুল হক তালকুদার রাজা, মির্জা আল মাহমুদ, জুলফিকার আলী জুনুসহ আইনজীবীরা সম্মিলতভাবে বিক্ষোভে অংশ নেন।
গত ১৫ ও ১৬ মর্চ হট্টগোল, হামলা, ভাংচুর, মামলা, সাংবাদিক পেটানো, প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ ও ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ পদের সব কটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল জয়ী হয়েছে। যদিও নির্বাচনে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এরপর থেকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আন্দোলন করে আসছেন।
এফএইচ/কেএসআর/জিকেএস