সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড
৯ বছরে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ২৬ হাজার বিচারপ্রার্থী
প্রাপ্তবয়স্ক থেকে শুরু করে সব বয়সী নারী-পুরুষ ও দরিদ্র শিশুদের আইনি সহায়তা দিয়ে আসছে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড। জাতীয় আইনগত সহয়তা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ বছরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট থেকে সরকারি খরচে ২৫ হাজার ৯৭৭ বিচারপ্রার্থী আইনগত সেবা পেয়েছেন।
এ সময়ে উচ্চ আদালত থেকে দুই হাজার ১১৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যার সবকটিতেই সরকারি খরচে বিচারপ্রার্থীদের আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিদের বিনামূল্যে আইনি সেবা দিতে ২০০৯ সালে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর গত ১৪ বছরে সারা দেশে বিনামূল্যে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ জনকে আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বিচারপ্রার্থীদের ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার ৪৯৮ টাকা আদায় করে দিয়েছে সরকার।
দরিদ্র ও অসহায় বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দিতে ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করে সরকার। এ আইনের আওতায় সরকার ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করে। দরিদ্র অসহায় মানুষের আইনের আশ্রয় ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ সংস্থার অধীনে সব জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টেও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়। যার চেয়ারম্যান হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি।
বিনামূল্যে আইনি সেবা দিতে ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির অফিস উদ্বোধন করেন তৎকলীন প্রধান বিচারপতি। এর আগে গঠন করা হয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। তখন এ কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান ও হাইকোর্ট বিভাগের (আপিল বিভাগ থেকে অবসরপ্রাপ্ত ও প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান) বিচারপতি মো. নিজামুল হক।
পরের বছর ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নতুন চেয়ারম্যান হন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। এরপর ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তারপর সর্বশেষ চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিচারপতি নাইমা হায়দারকে এ পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
সরকারি আইনি সেবা পাবেন যারা
অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি যার বার্ষিক গড় আয় সুপ্রিম কোর্টে আইনগত সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেড় লাখ এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয়। বীর মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে দেড় লাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয় এবং যে কোনো শ্রমিক যার বার্ষিক গড় আয় এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয়।
যে কোনো শিশু, মানবপাচারের শিকার যে কোনো ব্যক্তি. শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু, নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুরে, যে কোনো উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোক।
পারিবারিক সহিংসতার শিকার অথবা সহিংসতার ঝুঁকিতে আছেন এমন যেকোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি, বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ভিজিডি কার্ডধারী দুস্থ মাতা, অ্যাসিড দগ্ধ নারী বা শিশু। এছাড়াও আদর্শগ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তি, অসচ্ছল বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুস্থ নারী, যেকোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিনা বিচারে আটক অসচ্ছল ব্যক্তি, আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি, জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিবেচিত বা সুপারিশ করা অসহায় বা অসচ্ছল ব্যক্তি ও এ আইনের উদ্দেশ্যে পূরণে সংস্থা কর্তৃক চিহ্নিত ব্যক্তি।
এদিকে, শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ২০২৩’পালন করা হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়- ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ, বিনামূল্যে আইনি সেবার দ্বার উন্মোচন’। দিবসটি উপলক্ষে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ নানা কর্মসূচি আয়োজন করে।
বিনামূল্যে আইনি সেবা পেয়েছে পৌনে ৯ লাখ মানুষ
২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় আইনগত প্রদান সহায়তা সংস্থা থেকে বিনামূল্যে আইনি সেবা পেয়েছেন আট লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ জন। আইন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তাপ্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৯৭৭ জন।
৬৪ জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তাপ্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ৬ লাখ ৭২ হাজার ৮০১ জন। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেলে আইনি সহায়তাপ্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৭৩৮ জন। টোল ফ্রি হেল্পলাইনের মাধ্যমে আইনি সহায়তাপ্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা এক লাখ ৫৩ হাজার ৪১৩ জন। সর্বমোট আট লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ জন।
এছাড়াও ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এক লাখ ৫ হাজার ৬৫০ কারাবন্দি আইনি সহায়তা পেয়েছেন।
এফএইচ/কেএসআর/জিকেএস