র‌্যাবের হাতে আটকের পর নারীর মৃত্যু

হাইকোর্টে সুরতহাল-ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন তলব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০১ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২৩

নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র‌্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের সুরতহাল ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন তলব করেছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্টদের মঙ্গলবারের (২৮ মার্চ) মধ্যে এসব প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে কারা ওই নারীকে আটক করেছিলেন এবং কাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে, তাদের নাম পদবিসহ তথ্য চেয়েছেন আদালত। এছাড়াও তার মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না সেটি জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সোমবার (২৭ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহতমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

এর আগে মনোজ কুমার ভৌমিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। উপস্থাপনের পর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ১৫ মিনিটের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানাতে বলেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় এমন আদেশ দেন হাইকোর্ট।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র‌্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার (২২ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়। গত শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন>> র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার নারীর মৃত্যু

সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার‌্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র‌্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

নিহত সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র‌্যাবের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যায়। তবে তাকে র‌্যাবের কোন ক্যাম্পে নেওয়া হয়, সে ব্যাপারে তারা কিছুই জানতেন না। দুপুর ১২টার পর জানতে পারেন, সুলতানা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে গিয়ে তিনি র‌্যাবের লোকজন দেখেন। কিন্তু ভাগনি কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণ পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। যদিও মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে শনিবার দুপুরের পর।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৫ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, সুলতানার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পায় র‌্যাব। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ ছিল। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে র‌্যাব অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র‌্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার দুপুরে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মৌমিতা জলিল বলেন, বুধবার দুপুরে র‌্যাবের লোকজন অসুস্থ অবস্থায় এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জরুরি বিভাগে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ওই রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহীতে পাঠানো হয়। ওই সময় তার শরীরে কোনো চিহ্ন ছিল না।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই নারী পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তারপর তাকে নওগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন>> কর্মীদের উৎসাহ বোনাস নিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চায় ওয়াসা

নিহত সুলতানার ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত বলেন, আমার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র‌্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, আটকের পর ওই নারীকে র‌্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকেই তার পরিবারের লোকজন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা সঠিক নয়।

নিহত সুলতানার মামা নাজমুল হক বলেন, ১৭ বছর আগে সুলতানার সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর একমাত্র সন্তান অত্যন্ত কষ্ট করে বড় করছিলেন তিনি। শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে থেকে ছেলেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। তিনি ভূমি কার্যালয়ের একজন সামান্য কর্মচারী। কোনো দিন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ কেউ করেননি।

এফএইচ/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।