সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন
হট্টগোল-হাতাহাতি, দুই ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়ে প্রথম দিনের ভোট শেষ
হট্টগোল, হইচই ও ধাক্কাধাক্কির মধ্যদিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে (২০২৩-২৪) প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। হট্টগোলের কারণে নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণ শুরু করা যায়নি। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর শুরু হয় ভোটগ্রহণ।
তবে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মিলনায়তনের ভেতর থেকে পুলিশ বের করে দেয়। সারাদিনে দুই দফায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির মাঝেই পুলিশের হামলার শিকার হন প্রায় এক ডজন সাংবাদিক। এসময় পুলিশের লাঠিপেটায় আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।
সকাল থেকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিরোধের জেরে সকাল ১০টায় ভোট গ্রহণের পরিবর্তে দুপুরে ১২টায় শুরু হওয়া এ নির্বাচনে ২ হাজার ২১৭টি ভোট পড়েছে।
আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ এ তথ্য জানান।
আরও পড়ুন>> সুপ্রিম কোর্টে পুলিশের বেপরোয়া হামলার শিকার সাংবাদিকরা
অন্যদিকে, আজকের ভোটকে ‘অবৈধ ভোটগ্রহণ’ দাবি করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপের পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এদিন সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে শত শত পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। এছাড়া সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এরই মাঝে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোল চলার সময় বেলা পৌনে ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনের (ভোট কেন্দ্রের) ভেতরে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে হইচই-হট্টগোলের মাঝেই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এতে প্রায় এক ডজন সাংবাদিক আহত হন।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে দুপুর ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ অংশের মনোনীত উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোট শুরু হয়। এ নিয়ে দিনভর সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণে উত্তেজনা বিরাজ করে। বিকেল ৩টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করেন বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী। এরপর সাড়ে ৩টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে সমিতি প্রাঙ্গণে থাকা ভোটের প্যান্ডেলের দিকে আসেন। এরপর একপর্যায়ে প্যান্ডেল ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর পরপরই আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা স্লোগানসহ পাল্টা মিছিল করেন। উভয়পক্ষের আইনজীবীরা চেম্বার কক্ষে হামলা-ভাঙচুর করেন।
আরও পড়ুন>> দুঃখ প্রকাশ করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রধান বিচারপতির
অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সমিতি ভনের মিলনায়তনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এসময় সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণে পুলিশের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। এমন পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে সমিতির দুই দিনব্যাপী ভোটগ্রহণের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়। দুপুর ১২টা থেকে বিরতহীনভাবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপ–কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান মনির বলেন, প্রার্থীসহ বিএনপিপন্থিদের আপত্তির কারণে ভোটগ্রহণ শুরু করতে দুই ঘণ্টা দেরি হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর ১২টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। সমিতি প্রাঙ্গণে বিএনপিপন্থিরাই ভোটের প্যান্ডেল ভেঙেছে। এবারের নির্বাচনে ৮ হাজার ৬০২ জন ভোটারের মধ্যে প্রথমদিন ২ হাজার ২১৭টি ভোট পড়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন>> নতুন তারিখ ঘোষণার দাবি বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের
এদিকে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলা ঘটনায় মর্মাহত উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের এ ন্যক্কারজনক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও ল’রিপোর্টার্স ফোরাম, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনসহ (র্যাক) বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন।
এফএইচ/ইএ/এএসএম