‘দুর্ভাগ্য আমাদের, এখনো ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২০ এএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও ভোটের অধিকারের জন্য, মানবাধিকারের জন্য, ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রুপরেখা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ শিরোনামে ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর হয়েছে। এ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও কী চরম দুর্ভাগ্য আমাদের! এখানো আমাদের ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আমাদের ন্যূনতম মানবাধিকারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে, ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তার মূল উদ্দেশ্যই ছিল-একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটা গণতান্ত্রিক সমাজ। এ অবস্থা থেকে আজ আবার সেই ৫০ বছর আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।

তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। দুর্ভাগ্য আমাদের! আজ যারা শাসক, যারা নিজেরা দাবি করেন-তারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই দলই কিন্তু আবার ক্ষমতায় আছে। আর আজ তাদের শাসনামলে আমাদের আবার সেই লড়াইটা করতে হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমাদের এত অভিযোগ কেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংগত কারণেই আমাদের এত অভিযোগ। কারণ আওয়ামী লীগ দাবি করে-তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। এক সময় তাদের নেত্রীকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলা হতো। সেই দলটি অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই ক্ষমতায় এসে সবার আগে মানুষের অধিকারটা কেড়ে নিয়েছে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) সংবিধান পরিবর্তন করে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। এটাই তাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমার অপরাধ কী, এর প্রথম অপরাধ হচ্ছে-আপনার দল সেদিন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল প্রসঙ্গে বিচারপতি খায়রুল হকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আজ জাতি যে সংকটে, আজ জাতির সামনে যে অনিশ্চয়তা, জাতির সামনে যে অস্থিতিশীলতা-প্রতিটি নির্বাচন আসলেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, মারামারি শুরু হয়ে যায়, এর মূল কারণটাই হচ্ছে এ সিস্টেম। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটা কেউই আর সেভাবে ধরে রাখতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেদিন এ আইন সংসদে পাস করেছিল, সেদিন খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন এ আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ এ দেশে স্থায়ী সহিংসতা, অস্থিতিশীলতা এবং অনিশ্চয়তার ব্যবস্থা করলো।’

আজ এমন একজন নেত্রী, যিনি গণতন্ত্রের জন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি স্বৈরাচারী ব্যবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য দীর্ঘ নয় বছর লড়াই করেছেন। তার মতো একজন নেত্রীকে মামলায় সাজা দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কোন দেশে বাস করি আমরা? আজ কেসিনো সম্রাটের জামিন হয়, হাজী সেলিমের জামিন হয়, মায়ার জামিন হয়, কেউ কেউ মন্ত্রিত্বও চালান, অথচ যিনি গণতন্ত্রের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার জামিন হয় না।’

আজ জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে যে, আগামী দিনে আমরা এ রূপরেখা (বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা) বাস্তবায়ন করতে পারব কি না। আগামী দিনে আমরা ১০ দফা বাস্তবায়নের করতে পারব কি না। আজ যদি আমরা ব্যর্থ হই, আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন এ জাতি ব্যর্থ জাতিতে পরিণত হবে। এবং আমরা একটা কলোনিতে পরিণত হবো। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’

আজ বিভাজন কোথায় পৌঁছেছে। গ্রামের মানুষের মধ্যেও আজকে ভাগ হয়ে গেছে। এখন গ্রামের মধ্যেও দেখবেন পাশাপাশি দুটো দোকানের মধ্যে একটি বিএনপির দোকান আরেকটি আওয়ামী লীগের। এমনভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। এগুলো লক্ষ্য করার বিষয়। চাকরিতে ডিএনএ টেস্ট হয়। এতে দেখা হয় বিএনপির এতটুকু লেশমাত্র আছে কি না। তাহলে তার চাকরি হবে না। এ রকম একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কিছু দিনের জন্যও স্থায়ী করা যায় কি না সেই বিষয়ে আজ কথা বলা দরকার। আমাদের মতো একটা রাষ্ট্র যারা একটা যুদ্ধ করেছিল। তাদের সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল। সেই রাষ্ট্রে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে কেন আজকে আমাকে বলতে হবে, আমরা কি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছি। এ কথা কেন আমাদের বলতে হবে।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার।

রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রুপরেখা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো.ফজলুর রহমান প্রমুখ।

এফএইচ/এমআইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।