রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়িচালককে মারধর: ৩ আসামির অব্যাহতি চায় পুলিশ
উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানোয় উত্তেজিত হয়ে রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়িচালককে মারধরের অভিযোগে করা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের কর্মী কৌশিক সরকার সাম্যসহ তিনজনকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জহির হোসেন আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
কৌশিক সরকার ছাড়া অন্য দুই আসামি হলেন মো. সাজবুল ইসলাম ও মো. মুনষের আলী হারেজ। পুলিশের এ প্রতিবেদন গ্রহণ বিষয়ে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) ওয়ারী থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সারোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে বাদীকে হত্যার উদ্দেশে মারধর ও গুরুতর জখম করার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাদীও এ ব্যাপারে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। বাদীর চিকিৎসা গ্রহণপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামিদের মারধরে বাদী তার বাম গালে হালকা ব্যথা পান ও সেখানে কিছুটা ক্ষত হয়। সেক্ষেত্রে বাদীর আনা অভিযোগে পেনাল কোড আইনের ১৪৩/৩২৫ ধারার অপরাধের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
পুলিশের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এজাহারনামীয় আসামি কৌশিক সরকার সাম্য ও তদন্তে প্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. সাজবুল ইসলাম এবং মো. মুনষের আলী হারেজ হর্ন বাজানোকে কেন্দ্র করে মামলার বাদী মো. নজরুল ইসলামকে চড়থাপ্পড়, কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে সাধারণ জখম করে হুমকি দিয়ে পেনাল কোড আইনের ৩২৩/৫০৬/৩৪ ধারার অপরাধ করেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়, যা অধর্তব্য অপরাধ বলে প্রকাশ পায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার সার্বিক তদন্তে পাওয়া সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ও বাদীর চিকিৎসা গ্রহণপত্র এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতার এজাহারনামীয় আসামি কৌশিক সরকার সাম্য এবং এ মামলার ঘটনায় জড়িত তদন্তে প্রাপ্ত পলাতক আসামি সাজবুল ও মুনষের বিরুদ্ধে অধর্তব্য অপরাধ পেনাল কোড আইনের ৩২৩/৫০৬/৩৪ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। পেনাল কোড আইনের ১৪৩/৩২৫ ধারায় অপরাধের সত্যতা প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিদের অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।
২০২২ সালের ২৭ জুন মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে ওই গাড়িচালক মামলার বাদী নজরুল ইসলাম ওয়ারী থানায় মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালের ২৬ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে নজরুল ইসলাম বঙ্গভবন থেকে রাষ্ট্রপতির নাতি ইসা আব্দুল্লাহকে (৮) প্রাইভেট পড়ার জন্য রাজধানীর ওয়ারী থানাধীন চামু ডেল্টার মোড়ে নিয়ে যান। সেখানে ইসা আব্দুল্লাহকে নামিয়ে দেন। এরপর বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে ওই এলাকার টিপু সুলতান রোডের মাথায় পৌঁছালে আসামি কৌশিক সরকার সাম্য মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। এসময় গাড়িচালক নজরুল পেছন থেকে হর্ন দিলে আসামি উত্তেজিত হয়ে গাড়ির দিকে আসেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে চালকের মুখে থুথু নিক্ষেপ করেন এবং গাড়ির পেছনে জোরে লাথি মারেন।
এসময় চালক নজরুল ইসলাম আসামির পরিচয় জানার চেষ্টা করলে তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে মোবাইলে অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর আসামি কৌশিকসহ অন্যরা পরস্পর যোগসাজশে নজরুলকে মারধর করেন এবং হত্যার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যান।
জেএ/এমকেআর/এএসএম