ঢাবিতে গাড়ির চাপায় নিহত
ঘুম থেকে মা বলে চিৎকার করে ওঠে রুবিনার ছেলে রোহান
রুবিনার একমাত্র ছেলে রোহান (১৩)। প্রায় সময়ই কান্না করছে। রোহান ঘুম থেকে মা বলে চিৎকার করে ওঠে। বছর খানেক আগে তার বাবাও অসুস্থ হয়ে মারা যান। এখন তার দুনিয়ায় আর কেউই নেই। এখনো স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি সে।
কথাগুলো বলছিলেন একমাস আগে ঢাবির সাবেক সহকারী অধ্যাপকের গাড়ির চাপায় প্রাণ হারানো নারীর ভাই জাকির হোসেন মিলন। গত ২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় তার বোন রুবিনা আক্তার (৪০) নিহত হন। গাড়িচালক ছিলেন ঢাবির সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহ। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করেন জাকির হোসেন মিলন।
মামলায় আসামি জাফর কারাগারে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মামলার তদন্ত শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
গত ২ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকায় একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয় প্রাইভেটকারটি। এতে ছিটকে পড়েন মোটরসাইকেল আরোহী রুবিনা আক্তার। তিনি প্রাইভেটকারের নিচেই আটকে পড়েন। ওই অবস্থায় চালক গাড়ি না থামিয়ে বেপরোয়া গতিতে টিএসসি দিয়ে নীলক্ষেত এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে উপস্থিত জনতা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলেও চালক গাড়ি থামাননি। পরে নীলক্ষেত মোড়ে গিয়ে আটকে যায় গাড়িটি। সেসময় চালককে গণপিটুনি দেয় উপস্থিত জনতা। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে আহত নারী ও গাড়িচালককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে ওই নারী মারা যান। আর গাড়িচালক ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আসামি আজহার জাফর ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৮ সালে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কারাগারে জাফর, প্রয়োজনে আবার রিমান্ডের আবেদন
প্রায় একমাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ১ জানুয়ারি মামলার আসামি জাফরকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জাফর। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামি জাফরকে পরবর্তীসময়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিতে প্রয়োজন হতে পারে। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কারাগারে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।
মামলার বাদী নিহত রুবিনা আক্তারের ভাই জাকির হোসেন বলেন, একমাস হলো বোন চলে যাওয়ার। ঘাতক জাফর আমার বোনকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলেছে। আজ বোনের একমাত্র ছেলে রোহান খুব অসহায়। প্রায় সময় মা মা করে কান্না করে। ভয়ে ঘুম থেকে চিৎকার করে ওঠে। আমাদের পরিবারেও একই অবস্থা। কেউ এখনো স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, বোনের স্বামী এক বছর আগে মারা গেছেন। রোহান এখন অসহায় দিন পার করছে। আমরা যতই বোঝানোর চেষ্টা করছি, কিছুই বুঝছে না। তাকে আব্দুর রউফ কলেজে ক্লাস নাইনে ভর্তি করে দিয়েছি। সে আমার কাছে আর তার খালার কাছে থাকে। আমার বোনের হত্যাকারী জাফরের বিচার চাই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাফর জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় রুবিনা আক্তার (৪০) নিহত হন। এ বিষয়ে নতুন কিছু উদঘাটনের নেই। অভিযুক্ত গাড়িচালক ঢাবির সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাকে। জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে অনেক সাক্ষীর। গাড়ির মালিক যাচাইয়ের জন্য বিআরটিএ’র কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যে জাফরের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করবো।
জেএ/এমএইচআর/জিকেএস