জঙ্গি ছিনতাই কাণ্ডে সরগরম, আদালতপাড়ায় আলোচনায় ছিল ডিআইজিদের সাজা

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে করে ছিনিয়ে নেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে। এ নিয়ে বছরের শেষ দিকে এসে সরগরম ছিল আদালতপাড়া। অন্যদিকে বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল তিন ডিআইজির সাজা। ছিনতাইয়ের পর মাস পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার করা যায়নি দুই জঙ্গিকে। অন্যদিকে কারাগারেই দিন কাটছে সাজাপ্রাপ্ত সিনিয়র তিন পুলিশ কর্মকর্তার।

পুলিশের চোখে স্প্রে করে আসামি ছিনতাই

ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে করে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা। ২০ নভেম্বর দুপুরে ঘটে এ ঘটনা। এসময় আরও দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে তারা। পরে ঘটনাস্থল থেকে আরাফাত ও সবুরকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় কোর্ট পরিদর্শক জুলহাস বাদী হয়ে ২০ জনের নামে একটি মামলা করেন। মামলায় আরও সাত-আটজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ মামলায় আনসার আল ইসলামের একাধিক সদস্যকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে এখনো ছিনিয়ে নেওয়া দুই আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

হাজতখানার পুলিশ পরিদর্শকসহ বরখাস্ত আটজন

দুই আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সিএমএম আদালতের হাজতখানার আদালত পরিদর্শক মতিউর রহমানসহ আটজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অপর পুলিশ সদস্যরা হলেন- হাজতখানার ইনচার্জ (এসআই) নাহিদুর রহমান ভুইয়া, এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফ হাসান, জয়নাল, আব্দুস সাত্তার, নুরে আজাদ ও মাহামুদ আলম।

অন্যদিকে এ ঘটনায় পুলিশ সদরদপ্তরের একজন ডিআইজিকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রেড অ্যালার্ট জারি করা হয় রাজধানীতে। রাজধানীর প্রতিটি থানা ও অন্যান্য ইউনিটকে চেকপোস্ট বসানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ২০ নভেম্বর বলেন, এ ঘটনায় কারো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ঘোষণা করা হয় ২০ লাখ টাকা পুরস্কার।

তিন ডিআইজির সাজা

সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান মিজানকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া কারা অধিদপ্তরের সাময়িক বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) বজলুর রশীদকে পাঁচ বছরের ও সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের ৮ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ তিন রায় আলোচনায় ছিল ঢাকার আদালতপাড়ায়।

ডিআইজি মিজানের তিন বছরের কারাদণ্ড

অবৈধভাবে তথ্যপাচার ও ঘুস লেনদেনের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান মিজানের তিন বছরের কারাদণ্ডর আদেশ দেন আদালত। এছাড়া এ মামলায় আরেক আসামি দুদকের তৎকালীন পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের আট বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।

বজলুর রশীদের ৫ বছরের কারাদণ্ড

তিন কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় কারা অধিদপ্তরের সাময়িক বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) বজলুর রশীদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া রাষ্ট্রের অনুকূলে তিন কোটি ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯০২ টাকা বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়। গত ২৩ অক্টোবর ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার আদেশও দেন আদালত। অনাদায়ে আরও ছয় মাস কারাভোগ করতে হবে তাকে।

পার্থ গোপালের ৮ বছরের কারাদণ্ড

ঘুসগ্রহণ ও মানি লন্ডারিং (অর্থপাচার) আইনের মামলায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের ৮ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। গত ৯ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম পৃথক দুই ধারায় এ রায় ঘোষণা করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় পাঁচ বছর এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় দুদক অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় তাকে খালাস দেওয়া হয়।

জেএ/এমএইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।