ছয়টি কোর্টপ্রযুক্তি মামলাজট নিরসনে সহায়তা করবে: প্রধান বিচারপতি
মামলাজট নিরসন করতে ও বিচার কার্যক্রম স্বচ্ছ করতে সুপ্রিম কোর্টের উদ্ভাবিত ছয়টি কোর্টপ্রযুক্তি সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে ছয়টি কোর্টপ্রযুক্তির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তথা বিচার বিভাগ আজ এক নতুন দিগন্তে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। একবিংশ শতকের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ধারায় বিচার বিভাগে আজ তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একগুচ্ছ পরিষেবার সার্থক প্রবর্তন হতে যাচ্ছে।
উদ্ভাবিত ছয়টি প্রযুক্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, প্রথমটি অধস্তন আদালতের জন্য গঠিত মনিটরিং কমিটির প্রস্তুত করা ছক অনুসারে অধস্তন আদালত থেকে মামলার পরিসংখ্যান পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজিকরণসহ তথ্য-উপাত্ত দ্রুততার সঙ্গে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। এই সফটওয়ার মনিটরিং কমিটির কাজ আরও গতিশীল করবে, সর্বোপরি মামলাজট নিরসনে সহায়তা করবে।
দ্বিতীয় প্রযুক্তিটির মাধ্যমে অধস্তন আদালতের বিচারকরা অতি সহজেই তাদের দেওয়া রায় ও আদেশ প্রস্তুত করা প্ল্যাটফর্মে আপলোড করতে পারবেন, যা বিচারপ্রার্থী জনগণ সহজেই দেখতে পারবেন।
তৃতীয়টি আপিল বিভাগের প্রবেশ পাস, যার মাধ্যমে আপিল বিভাগের এজলাস সংশ্লিষ্ট এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ও যেসব বিচারপ্রার্থী আপিল বিভাগে প্রবেশ করবে তাদের তথ্যসমূহ আমাদের কাছে সংরক্ষিত থাকবে।
চতুর্থটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অ্যাপ। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন অনলাইন পরিষেবা ও তথ্য সহজ করার প্রয়োজনকে বিবেচনায় রেখে এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে থাকা সব তথ্য অতি সহজে পাওয়া যাবে। গুগল প্লে স্টোরে এই অ্যাপ উন্মুক্ত করা হবে।
পঞ্চমটি সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটসের জন্য প্রস্তুত করা একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে দেশের শিশু আদালতের মামলার পরিসংখ্যান ও আইনের সঙ্গে সংঘাতে আসা শিশুদের বিষয়ে নেওয়া ব্যবস্থাসহ অন্যান্য পরিসংখ্যান কমিটির নিকট অতি সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে পাঠানো সম্ভব হবে।
সবশেষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অনুলিপি শাখার কার্যক্রম গতিশীল, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব করে তুলতে একটি সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আপিল বিভাগের রায় ও আদেশের অনুলিপি অতি সহজ প্রক্রিয়ায় সরবরাহ করা হবে। এতে একদিকে জনসাধারণ যেমন উপকৃত হবে, অন্যদিকে অনুলিপি শাখার কার্যক্রম আরও সহজে তত্ত্বাবধান করা যাবে।
তিনি বলেন, নকল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ধরার জন্য সারাদেশের আদালতগুলোতে এক হাজারের অধিক ডিজিটাল ডিভাইস সংযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, যে ছয়টি প্রযুক্তিনির্ভর টুলস আজ এখানে যুক্ত হবে। সেগুলো বিচার বিভাগকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিনির্ভর করার প্রাথমিক পদক্ষেপ মাত্র। আজ উন্মুক্ত হওয়া সফটওয়ার, অ্যাপ ও ওয়েব অ্যাপগুলোর প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র উপযোগিতায় সমৃদ্ধ। যে কাজগুলোর জন্য আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হতো সেগুলো কয়েকটি ক্লিকে নিমিষেই সম্পাদিত হবে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক এবং সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা ।
এফএইচ/আরএডি/জিকেএস