‘জামায়াতের বিচারের জন্য আইন সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে তোলা হবে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:২১ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২২

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে আগামী জাতীয় সংসদের অধিবেশনে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাব-রেজিস্ট্রারদের এক কর্মশালার উদ্বোধন শেষে আনিসুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, একাত্তর সালে যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের বিচার করতে সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এ বিচার করে দেখিয়েছে। এ বিচার আওয়ামী লীগ সরকার করে। আপনারা দেখেছেন এরই মধ্যে অনেক রায় কার্যকর হয়েছে। জামায়াতের বিচার করতে আইনের পরিবর্তন দরকার হবে। সেটা আমি অনেক আগেই বলেছি। এ আইনের সংশোধনের জন্য মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা কিছুদিনের মধ্যেই আইনটা পাস করবো। তারপর বিচারকাজ শুরু হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে অন্য নাম নিয়ে নিবন্ধন নিতে তারা নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। এটা একটা বিচারাধীন বিষয়। আমি দেখতে চাই নির্বাচন কমিশন এটা কীভাবে হ্যান্ডেল করে। তারপর এটার ব্যাপারে আমি বক্তব্য দেব।

জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে আপিল বিভাগে যেটা বিচারাধীন আছে, সেটার বিষয়ে শুনানির উদ্যোগ নেবেন কি না, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, প্রয়োজন হলে উদ্যোগ নেব।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাব-রেজিস্ট্রারদের উদ্দেশে বলেছেন, জনগণকে কোনো ধরনের হয়রানি না করে দ্রুততম সময়ে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করতে হবে এবং জাল-জালিয়াতি রোধে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহীদুল আলম ঝিনুকের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বক্তৃতা করেন।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এরপর দলটির নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। এরপর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন। ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৪ সালে সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। একই বছরের ২৫ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে দাখিল করা হয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাত ধরনের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশও করা হয় ওই তদন্ত প্রতিবেদনে।

জানা গেছে, এর আগে ট্রাইব্যুনালস আইনের তিন দফা সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধন করা হয়েছে ২০১৩ সালে। ওই বছরের ৫ ফেব্রুায়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তখন কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মুখে ট্রাইব্যুনালস আইনের তৃতীয় সংশোধনী সংসদে পাস করা হয়। এতে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামি (উভয়) পক্ষের আপিল করতে পারবেন বলে সমান সুযোগ রাখা হয়। এ সংশোধনীতে মানবতাবিরোধী অপরাদের দায়ে সংগঠনের বিচারের সুযোগ তৈরি করা হলেও, দল হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তি কী হবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ সংশোধনীর খসড়ায় বিদ্যমান আইনের ১০টি ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি ধারায় কেবল ‘ব্যক্তি’ শব্দের পাশাপাশি ‘সংগঠন’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। খসড়ার ২০ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল দোষী সাব্যস্ত সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে। সংগঠন বা অন্য কোনো নামে ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবেন। বিদ্যমান আইনের ২০ ধারায় কেবল ব্যক্তির সাজার বিধান রয়েছে। এখন দেখার পালা কোন প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়।

এফএইচ/এমএইচআর/জিকেএস/এমআইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।