টিকটকারদের ভিডিওধারণ বন্ধে এনা-হানিফসহ ১৫ পরিবহনকে নোটিশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫১ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২২
ওভারটেক করার সময় বাসে ভিডিও করছেন টিকটকাররা/ছবি: সংগৃহীত

টিকটকার ও ফেসবুকাররা চালকদের দ্রুতগতিতে বেপরোয়াভাবে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চালাতে উদ্বুদ্ধ করায় সড়কে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। এ থেকে বিরত থাকা এবং এমন ভিডিওধারণ নিষিদ্ধ করার নির্দেশনা চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব, বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এবং বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতিকে এ নোটিশ পাঠানো হয়।

একইসঙ্গে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, গ্রিন লাইন পরিবহন, এসআর ট্রাভেলস, এনা ট্রান্সপোর্ট, নাবিল পরিবহন, বাবলু এন্টারপ্রাইজ, সোহাগ পরিবহন, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস, গোল্ডেন লাইন, দেশ ট্রাভেলস, টিআর ট্রাভেলস, সাকুরা পরিবহন এবং ইমাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কাউন্টার ম্যানেজারকে নোটিশের অনুলিপি পাঠানো হয়।

জনস্বার্থে ৯ আইনজীবী এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। বিষয়টি শনিবার (৮ অক্টোবর) নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মেহেদী হাসান।

নোটিশ হাতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় এর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হবে বলা হয় লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

নোটিশ পাঠানো ৯ আইনজীবী হলেন- অ্যাডভোকেট এস এম জাবিরুল হক কাজল, মো. মেহেদী হাসান, আদলু সাইন, এইচ এম রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, মুশফিকুর রহমান সেতু, মো. হুমায়ুন কবির সরকার, আবু তাহের রনি, মো. ওবায়দুল্লাহ কাজী ও মো. মিলন হোসেন।

নোটিশে বলা হয়েছে, দেশের চলমান সড়ক ও মহাসড়কে আপনাদের (নোটিশগ্রহীতা পরিবহন মালিক) প্রতিষ্ঠানের বাস ও বিভিন্ন ধরনের পরিবহনসমূহ যাত্রীসেবায় নিয়োজিত রেখে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ঢাকা থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসে কিছু চালক বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর কারণে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রী প্রাণ হারাচ্ছেন। অনেকে পঙ্গু হয়ে পড়ে আছেন। অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে পরিবহনগুলোরও।

‘বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর পেছনে একটি স্বার্থান্বেষী মহল চালকদের বিভিন্ন সময়ে প্ররোচিত ও উৎসাহিত করে চলছে। মহাসড়কে বাস দিয়ে বাউলি বাজিতে মেতে উঠছে। এ স্বার্থান্বেষী মহলের অধিকাংশ ব্যক্তি ফেসবুক ও টিকটক ব্যবহার করেন। এসব ব্যক্তি ফেসবুক ও টিকটক ছাড়াও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাকাউন্ট/চ্যানেল খুলে চালকদের দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর উৎসাহ দিয়ে থাকে। সেসব দৃশ্যের ভিডিওধারণ করে ফেসবুক গ্রুপ, পেজ এবং টিকটকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন।’

‘ফেসবুকার ও টিকটকাররা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য চালকদের মধ্যে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করছে। গাড়ি চালানোর সময় তারা চালকের পাশে বসে বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোসহ উসকানি দিচ্ছে। বারবার হর্ন বাজানো, ওভারটেকিং, বাউলি দেওয়া, গুটি দেওয়া, ডিপার লাইট দেওয়া, হার্ড ব্রেকিং করাসহ বিভিন্নভাবে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন, যা ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ, ইউটিউব ও টিকটকের ভিডিও থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।’

এতে আরও বলা হয়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতের একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার ভিডিও (এক মিনিট ৪৮ সেকেন্ড) থেকে দেখা যায় যে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় হানিফ পরিবহনের একজন চালক রাতে যাত্রীবাহী বাস চালাচ্ছিলেন। চালকের পাশে থেকে কিছু ফেসবুকার ও টিকটকার চালককে বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে উৎসাহিত করতে থাকে। একপর্যায়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনের ট্রাককে বাউলি/ওভারটেকিং করতে গিয়ে পেছন থেকে ট্রাকটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রাকটি উল্টে যায়।

‘ওই সময় হানিফ পরিবহনের পেছনে থাকা ইমাদ পরিবহনের বাসচালককেও ফেসবুকার ও টিকটকাররা দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে উৎসাহিত করতে থাকে। যা ভিডিওতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। সড়ক ও মহাসড়কে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো এবং ফেসবুকার ও টিকটকার কর্তৃক চালকদেরকে ওভারটেকিং, বাউলিংয়ে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ ও অন্যান্য প্রচলিত আইনবিরোধী।’

এফএইচ/এএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।