সাংবাদিক আফতাব হত্যা
হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্সের দ্বিতীয় দিনের শুনানি আজ
একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল আবেদনের (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) ওপর দ্বিতীয় দিনের শুনানি আজ।
সোমবার (৪ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারানুম মিতি।
এর আগে সোমবার (৩ অক্টোবর) এই মামলায় পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এই শুনানি শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আবারও শুনানির জন্য রয়েছে।
প্রথম দিনে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারানুম মিতি পেপারবুক থেকে রায়ের পুরো অংশ পাঠ করে শোনান। এর মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের ৮ বছর ১০ মাস পর উচ্চ আদালতে বহুল আলোচিত এই মামলার আপিলের শুনানি শুরু হলো।
এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আঞ্জুমান আরা বেগম, কাজী শামসুন নাহার ও সায়েম মো. মোরসেদ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান খান ও আরিফুল ইসলাম।
এর আগে ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদকে হত্যার দায়ে পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন আদালত। পাশাপাশি অন্য একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রহমান সরদার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হলেন নিহত আফতাব আহমেদের গাড়িচালক মো. হুমায়ুন কবীর মোল্লা এবং বিলাল হোসেন কিসলু, হাবিব হাওলাদার, মো. রাজু মুন্সী ও মো. রাসেল। এছাড়া সাত বছর কারাদণ্ড পওয়া অন্য আসামি সবুজ খানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর পরপরই মামলায় ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এর মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির খালাস চেয়ে আপিল আবেদন করা হয় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায়।
রায়ে বলা হয়, সবুজ শুধু বাড়ি পাহারার দায়িত্বে ছিলেন। খুনের সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন না। তার বয়স ১৮। বয়স বিবেচনায় তাকে স্বল্পমেয়াদের শাস্তি দেওয়া হলো।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আফতাবের মতো প্রবীণ ও বিচক্ষণ সাংবাদিকের এ রকম মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ ধরনের অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর পশ্চিম রামপুরা ওয়াপদা রোডে ৬৩ নম্বরের নিজ বাসায় খুন হন ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদ। পরদিন সকালে তার হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। চারতলার ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় আফতাব আহমেদ একাই বসবাস করতেন। তার দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে থাকেন যশোরে। মেয়ে আফরোজা আহমেদ তার স্বামী ফারুক আহমেদের সঙ্গে থাকেন গাজীপুরে।
২০১৪ সালের ২৫ মার্চ আফতাব আহমেদের গাড়িচালক মো. হুমায়ুন কবিরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-৩ এর উপ-পরিদর্শক আশিক ইকবাল। ২০১৪ সালে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় বিভিন্ন সময় ২০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
১৯৬৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মাধ্যমে আফতাব আহমেদ সাংবাদিকতা শুরু করেন। আলোকচিত্র সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
এফএইচ/জেএস/জেআইএম