টাকা চাইলে ই-অরেঞ্জ গ্রাহকদের হুমকি দিতেন পুলিশ পরিদর্শক সোহেল
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বনানী থানার বরখাস্ত পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পণ্য সরবরাহের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিতেন তিনি। পরে গ্রাহককে পণ্য না দিয়ে আশ্রয় নিতেন প্রতারণার। পণ্য না পেয়ে গ্রাহক টাকা ফেরত চাইলে তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিতেন। টাকা আত্মসাৎ ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।
বরখাস্ত এ পুলিশ কর্মকর্তার প্রতারণার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গুলশান থানার পাঁচ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে তিনিসহ একাধিক ব্যক্তিকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি পুলিশ।
চার্জশিটে সোহেল রানাকে দেখানো হয়েছে পলাতক। জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে আরও ১৭টি। মামলাগুলোতে সোহেল রানার বোন ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্লাহ চৌধুরিও আসামি। এদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় আরও ২৩টি মামলা রয়েছে। মামলার চার্জশিটে এসব উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
ক্ষমতার অপব্যবহার করেন সোহেল রানা
সম্প্রতি গালিব নামে এক গ্রাহকের করা মামলায় ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বনানী থানার বরখাস্ত পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা (৪৭), প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্লাহ ও কাওছার আহম্মেদের (৪৫) বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক জেহাদ হোসেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৬/৪২০/৫০৬/১০৯ ধারায় অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থানায় মামলাটি করেন গালিব হাসান।
মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার এহজারনামীয় আসামি শেখ সোহেল রানা ও সোনিয়া মেহজাবিন আপন ভাই-বোন। শেখ সোহেল রানা বাংলাদেশ পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক পদের একজন কর্মকর্তা। তিনি সবশেষ বনানী থানায় ওসি (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আসামি শেখ সোহেল রানা তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিধিবহির্ভূতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার জন্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে ই-অরেঞ্জ শপ নামক কোম্পানিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। পণ্য না পেয়ে টাকা চাইলে ই-অরেঞ্জ গ্রাহকদের হুমকি দিতেন ও ভয়ভীতি দেখাতেন সোহেল রানা।
দুই কোটি ৫৮ লাখ ২২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মাহফুজের মামলা
দুই কোটি ৫৮ লাখ ২২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থানায় সোনিয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাহফুজ নামে এক গ্রাহক। সম্প্রতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, প্রতিষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার বরখাস্ত পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা, চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্লাহ চৌধুরি, জায়েদুল ফিরোজ, বিথি আক্তার ও নাজমুল আল রাসেলের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪০৬/৪২০/৫০৬/৩৪ ধারায় চার্জশিট দাখিল করেন।
৪৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮৯ টাকা আত্মসাৎ করেন আপেলের
৪৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী আপেল। সম্প্রতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান আসামি সোনিয়া, শেখ সোহেল রানা, মাসুকুর রহমান, আমান উল্লাহ চৌধুরি, জায়েদুল ফিরোজ, আব্দুল কাদের, রুবেল খান, কাওসার আহম্মদ, কামরুল হাসান আকাশ, বিথি আক্তার ও নাজমুল আলম রাসেলকে অভিযুক্ত করে পেনাল কোডের ৪০৬/৪২০/৫০৬/৩৪ ধারায় চার্জশিট দাখিল করেন।
৩৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৮ টাকা আত্মসাৎ করেন ইসতিয়াকের
পণ্য না দিয়ে ৩৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সোনিয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন গ্রাহক ইসতিয়াক। সম্প্রতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক সিরাজ উদ্দিন আসামি সোনিয়া মেহজাবিন, মাসুকুর রহমান, আমান উল্লাহ চৌধুরি, কামরুল হাসান আকাশ, কাওসার আহম্মদ, শেখ সোহেল রানা, বিথি আক্তার, নাজমুল আলম রাসেল, নাজনীন নাহার বিথি, আব্দুল কাদের, রুবেল খান ও নূরজাহান ইসলামকে অভিযুক্ত করে পেনাল কোডের ৪০৬/৪২০/৫০৬/৩৪ ধারায় চার্জশিট দাখিল করেন।
২৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন মেহেদীর
পণ্য না দিয়ে ২৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০২১ সালের ১ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করেন মেহেদী আদনাল আহম্মদ নামে এক গ্রাহক। সম্প্রতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক তুষার নন্দী ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, শেখ সোহেল রানা, মাসুকুর রহমান, আমান উল্লাহ চৌধুরি, মোহাম্মদ জায়েদ ফিরোজ, বিথি আক্তার, কাওসার আহম্মেদ ও নাজমুল আলম রাসেলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৬/৪২০/৩৪ ধারায় অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় চার্জশিট দাখিল করেন।
ভারতে আটক সোহেল রানা
শেখ সোহেল রানাকে ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে আটক করে। পরের দিন তাকে কোচবিহারের আদালতে হাজির করা হলে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তিনি ভারতের কারাগারে আটক।
জেএ/এএসএ/জিকেএস