আপিল শুনানির অপেক্ষায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ১০ মামলা
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ইতোমধ্যে ছয় জনের রায় ঘোষণা এবং চার জনের দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এবার ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আব্দুস সোবহান, মীর কাশেম, এটিএম আজহারুল ইসলাম, সৈয়দ কায়সার ও মোবারকসহ ১০জন আসামির আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত মোট ২১টি মামলার বিচারকাজ শেষ করেছেন। এতে দণ্ডিত হয়েছেন ২৪ জন। তাদের মধ্যে মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আপিল নিষ্পত্তির পর চার জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল ছিল। কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড পর্যায়ক্রমে কার্যকর করা হয়েছে।
মীর কাশেম আলী : ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর জামায়াতের নির্বাহী সদস্য মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। তার দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। বর্তমানে আপিলটি শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে মীর কাশেম আলীর আপিল শুনানি শেষ হতে পারে।
মোবারক হোসেন : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা মোবারক হোসেনকে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। তার দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেছেন।
সৈয়দ কায়সার : জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মো. কায়সারকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয় ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর। তিনিও তার দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।
এটিএম আজহার : ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলামকে। তার দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে করা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
আব্দুস সোবহান : জামায়াত নেতা ও সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমীর আবদুস সোবাহানকে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ। তিনিও তার দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেছেন।
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার : ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে। তিনি পলাতক থাকায় কোনো আপিল হয়নি। তবে রাষ্ট্রপক্ষ তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করেছেন।
মাহিদুর ও আফসার : ২০১৫ সালের ২০ মে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় মাহিদুর রহমানের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করলেও সামর্থ না থাকায় আফসার হোসেন আপিল করতে পারেনি। তবে তিনি জেল আপিলের আবেদন করেছেন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে।
হাছান আলী : ২০১৫ সালের ৯ জুন সৈয়দ মো. হাছান আলীকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড বা গুলি করে (ফায়ারিং স্কোয়াডে) হত্যার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আসামি পলাতক থাকায় কোনো আপিল করা হয় নি।
ফোরকান মল্লিক : ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই ফোরকান মল্লিককে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ফোরকান মল্লিক তার দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেছেন।
সিরাজ ও আকরাম : এ ছাড়া সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল শেখ সিরাজুল হককে মৃত্যুদণ্ড ও খান আকরাম হোসেনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন। এই রায়ের বিরুদ্ধেও একটি আপিল হয়েছে।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায় ঘোষণা করা হয়। সব মিলিয়ে ২১টি মামলায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ১৬টি আপিল আবেদন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে ছয়টি মামলা নিষ্পত্তি এবং আপিলের রায়ের পরে রিভিউ নিষ্পত্তি করে চার জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
এদিকে জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর করা আপিল আবেদন সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে গত ৫ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের দণ্ড বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এখন অপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের । রায় প্রকাশের পর তিনি রিভিউ করতে পারবেন।
অপরদিকে গত ১৭ জানুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে আপিলের পূর্নাঙ্গ রায়ের রিভিউ শুনানির অপেক্ষায়। আপিলের রায়ের ১৫ মাস পর ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি রাষ্ট্রপক্ষও ইতোমধ্যে আপিলের ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছে। সেখানে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহাল চাওয়া হয়।
২০১১ সালের ৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে প্রথম জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর সাঈদী আপিল করলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।
এফএইচ/এআরএস/এমএস