ধর্ষণের বিচার চেয়ে হাইকোর্টে আসা কিশোরীর পক্ষে লিগ্যাল এইডের আপিল
ধর্ষণের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া বিজিবি সদস্যের বিচার চেয়ে হাইকোর্টের এজলাসের সামনে দাঁড়ানো সেই কিশোরীর পক্ষে আপিল করা হয়েছে।
রোববার (২৬ জুন) কিশোরীর পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী বদরুন নাহার এ আপিল করেন।
বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী নিজে। আপিলে নারাজি আবেদন গ্রহণ করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আপিল আবেদনের ওপর হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।
এর আগে গত ১৫ জুন সকালে ওই কিশোরী তার মাকে সঙ্গে নিয়ে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আসেন। এসময় ওই কিশোরী আদালতের এজলাস কক্ষের ডায়াসের সামনে গিয়ে দাঁড়ান।
আদালত জানতে চান, কে আপনারা? কী চান? জবাবে ওই কিশোরী নিজের নাম ও পরিচয় জানিয়ে সঙ্গে থাকা ব্যক্তি তার মা বলে আদালতকে জানায়।
কিশোরী আরও বলেন, আমার বয়স ১৫ বছর। আমি ধর্ষণের শিকার। একজন বিজিবি সদস্য আমাকে ধর্ষণ করেছে। কিন্তু নীলফামারীর আদালত (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল) তাকে খালাস দিয়ে দিয়েছে। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের টাকা পয়সা নাই। আমরা আপনার কাছে বিচার চাই।
এরপর আদালত ওই কিশোরীর কাছে জানতে চান, যে তার কাছে মামলা সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আছে কি না? তখন কিশোরী মামলার কাগজ আছে বলে আদালতকে জানান। এসময় আদালতে উপস্থিত সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের আইনজীবী বদরুন নাহারকে মামলাটির দেখভাল করতে বলেন।
জানা গেছে, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার এক ভ্যানচালকের সন্তান ওই ভুক্তভোগী কিশোরী। কিশোরী মেয়েকে নিয়ে বিজিবি সদস্য আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর মামলা করেন কিশোরীর মা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর বিকেলে সৈয়দপুর শহরের সাজেদা ক্লিনিকে জন্ম নেওয়া বোনের নবজাতককে দেখানোর কথা বলে বিজিবি সদস্য আক্তারুজ্জামান তার প্রতিবেশি বাড়ির কিশোরীকে (ধর্ষণের শিকার কিশোরী) তার বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে মোটরসাইকেলে করে শহরে নিয়ে যায়। মোটরসাইকেলে দুজনের শহরের দিকে যাওয়ার বিষয়টি দেখে তাদের ডাক দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি কোনো।
এরপর সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরীর বড় বোন তাদের মাকে জানায়, আক্তারুজ্জামানের বোন তাকে জানিয়েছে (ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে) তার ছোটো মেয়ে আজ ফিরবে না। পরদিন সকাল ৮টায় আক্তারুজ্জামানের বোন ভুক্তভোগী কিশোরীর জন্য জামা নিতে তাদের বাড়িতে আসে। মাংসের ঝোল লাগায় আগের দিন পড়ে থাকা জামা ধুয়ে দেওয়া হয়েছে বলে আক্তারুজ্জামানের বোন কিশোরীর ঘর থেকে তার আরেকটি জামা নিয়ে যায়। এরপর রাত ৯টার দিকে আক্তারুজ্জামান মোটরসাইকেলে করে ভুক্তভোগী কিশোরীকে তার বাড়িতে রেখে যায়।
‘বাড়িতে রেখে যাওয়ার পর মেয়ে ভুলভাল বকতে থাকায় পরদিন ১১ নভেম্বর স্থানীয় হুজুরের কাছে মেয়েকে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করানো হয়। এতেও মেয়ে সুস্থ না হওয়ায় ১২ নভেম্বর সকালে নীলফামারীর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। ওইদিনই মেয়েকে ওয়ান ষ্টপ ক্রাইসিস সেন্টার-ওসিসিতে স্থানান্তর করা হয়।’
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নীলফামারীর ওই হাসপাতাল থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের ছাড়পত্রে ‘যৌন নিপীড়নের’ কথা উল্লেখ করা হয়। পরে এই ঘটনায় কিশোরীর মা একই বছরের ২১ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন।
তবে তদন্তের পর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অপরাধের প্রমাণ না পাওয়ার কথা বলা হলে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গত ১৭ মে আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। এরপরই ওই কিশোরী বিচার চেয়ে হাইকোর্টে আসেন।
এফএইচ/এমএইচআর/জিকেএস