নকল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, সুপ্রিম কোর্টে ৩ জনকে গ্রেফতার করলো সিআইডি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১৯ পিএম, ১৯ মে ২০২২

নকল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার আসামিরা হলেন দেলোয়ার হোসেন, মো. মনি হোসেন ও জাকির হোসেন। এদের মধ্যে দেলোয়ার ও মনি আপন ভাই। গ্রেফতারের পর তাদের সিআইডি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

নকল রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রির সময় বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দুপুরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. বজলুর রহমান ও হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রাব্বানীর সহযোগিতায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদের মধ্যে আপন দুই ভাই দেলোয়ার হোসেন ও মো. মনির হোসেনের গ্রামের বাড়ি শরীতপুরের জাজিরায়। জাকির হোসেনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাসে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্বরত স্পেশাল অফিসার ও হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (অর্থ ও উন্নয়ন) এ স কে এম তোফায়েল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, নকল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, কোর্ট ফিসহ বিভিন্ন জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে এমন বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. বজলুর রহমান ও হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রাব্বানীসহ অন্যরাও কাজ করে যাচ্ছেন। তারা এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ও করণীয় নিয়েও আলোচনা করেছেন।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার নকল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি বিক্রির সময় তাদের তিনজনকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি টিম। তখন যেসব রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তাদের হাতে ছিল তা সিআইডির এক্সপার্ট দিয়ে পরীক্ষা করার পরে ধরা পড়ে যে এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ নকল। এখন সিআইডি বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করাসহ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

তোফায়েল হাসান জানান, এর আগে গত মাসের শেষ দিকে আমরা বিষয়টি নিয়ে বাংলদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। আলোচনায় উঠে এসেছে যে নকল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফির কারণে সরকারের বিরাট অর্থ হাতছাড়া হচ্ছে। নকল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি হতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক তা বিশ্বাসই করতে পারছিল না। যখন তাদের দেখানো হলো তখন তারা বললেন ঠিক আছে। এ কারণে সরকার বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আসল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ১০ টাকা ২০ টাকা যাই হোক তার অংশ তো কয়েক টাকা হলেও লভ্যাংশটা সরকার পাচ্ছে। কিন্তু নকল হওয়ায় ওই একই দামের রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ১০ টাকারটা হয়তো তারা ৬ থেকে ৭ টাকা বিক্রি করছে। সরকার এক টাকাও পেলো না। আর সরকারি কোর্ট ফি যেটি ১০ টাকা সেটি হয়তো ১১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেটির নকল ৪ টাকা কমিয়ে দিলো।

সুপ্রিম কোর্টে ফৌজদারি, সিভিলসহ বিভিন্ন শাখা মিলিয়ে সপ্তাহের রবি ও বৃহস্পতিবার মামলার সংখ্যা বেশি হয়। সে হিসাবে এই দুদিনের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ মামলা হয়। সোম, মঙ্গল ও বুধবার এ তিনদিন সাত থেকে আটশ মামলা হয়। প্রতিদিন গড়ে যদি এই পরিমাণ মামলা হয় তা হলে কোর্ট ফি থেকে কতো রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এছাড়াও মামলা দায়ের, রায় লেখাসহ বিভিন্ন কাজে রেভিনিউ স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি জাল; এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আমাদের সবাইকে সতর্ক করেছেন। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।

দুদুকের আইনজীবী বলেন, কোর্ট ফি নির্ধারিত থাকলেও সেটা (স্ট্যাম্প) জাল, মানে ২০ টাকা হোক আর একশ টাকা হোক ওই কোর্ট ফিটা হলো জাল। কিন্তু যখন রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সম্পূর্ণ নকল হয় তখন সরকার লভ্যাংশ তো দূরের কথা কোনো টাকাইতো পাচ্ছে না।

খুরশীদ আলম খান বলেন, রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সম্পূর্ণ নকলমুক্ত করার জন্য প্রধান বিচারপতি পদক্ষেপ নিচ্ছেন এটা খুব ভালো। রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি যদি এভাবে জাল হয় তাহলে সরকারের তো প্রচুর রাজস্ব হাতছাড়া হবে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি নিয়ে প্রধান বিচারপতির এই পদক্ষেপকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করা উচিত।

এফএইচ/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।