দুদক কর্মকর্তা শরীফের চাকরিচ্যুতি: ১০ আইনজীবীর করা রিট খারিজ
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে অপসারিত (চাকরিচ্যুত) মো. শরীফ উদ্দিনের গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ উত্থাপিত হয়নি মর্মে রিটটি খারিজ করে দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
রিটকারী ১০ আইনজীবী ছিলেন- মোহাম্মদ শিশির মনির, রেজওয়ানা ফেরদৌস, জামিলুর রহমান খান, উত্তম কুমার বণিক, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. তারেকুল ইসলাম, মীর ওসমান বিন নাসিম, সৈয়দ মোহাম্মদ রায়হান, মো. সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নওয়াব আলী।
রিটে দুদকের চেয়ারম্যান, সচিব, কমিশনার (অনুসন্ধান), কমিশনার (তদন্ত), পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) এবং চাকরিচ্যুত সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীনকে বিবাদী করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছিলেন, আমরা কোনো ব্যক্তির পক্ষে রিট করিনি। আমরা আলোচিত ওই ঘটনায় চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দীন এবং দুদকের পাল্টাপাল্টি যে বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে, তার তদন্ত চেয়েছি। কারণ তদন্তেই প্রকৃত সত্য উঠে আসবে। জনমনে বিভ্রান্তি দূর হবে।
‘এছাড়া স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজনে একটি কমিটি গঠন এবং ওই কমিটি কর্তৃক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা রিটে চাওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নথি তলব করে বিষয়টি পর্যালোচনারও আবেদন করা হয়েছে।’
এর আগে শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে চিঠির মাধ্যমে আবেদন করেছিলেন এই ১০ আইনজীবী। তবে ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ ঘটনায় সংক্ষুব্ধ হলে ওই আইনজীবীদের যথাযথ আবেদন (রিট) নিয়ে আসার কথা বলেন। সে অনুযায়ী রিট করেন ওই ১০ আইনজীবী।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২) অনুযায়ী উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। শরীফ উদ্দিন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পটুয়াখালীতে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তার আগে সাড়ে তিন বছর তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে। সেখানে থাকাকালে কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা দুর্নীতির ঘটনায় ১৫৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন তিনি, যেখানে অ্যাডমিন ক্যাডার ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও ছিলেন।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক, সেসব মামলার বাদী ছিলেন শরীফ। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদ দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচিত হন শরীফ উদ্দিন।
এছাড়া অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ স্থানান্তর ও নতুন সংযোগ প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) বিভিন্ন অভিযোগ নিয়েও তদন্ত করেন শরীফ।
পরে অভিযোগের ‘সত্যতা পেয়ে’ কেজিডিসিএলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজনকে আসামি করে গত বছরের ১০ জুন মামলা করেন শরীফ।
এরপর আলোচিত মামলা দায়েরের পর চট্টগ্রাম থেকে শরিফ উদ্দিনকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। সবশেষে জীবননাশের হুমকি পাওয়ার ১৬ দিনের মাথায় শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হলো।
তবে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতর পর দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য যতো রকমের কাজ করা যায়, একটাও বাকি রাখেননি শরীফ উদ্দিন।
এফএইচ/এমএইচআর/জিকেএস