দুদকের মামলায় অভিযোগ গঠনের দিনেই অব্যাহতি পেলেন সব আসামি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১৯ পিএম, ০১ মার্চ ২০২২

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া ছাড়াই প্রভাব খাটিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৩টি দোকান বরাদ্দের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় অভিযোগ গঠনের দিনেই সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। অব্যাহতি পাওয়া আমাসিদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মাহতাব উদ্দিনের ছেলেসহ ২০ আসামি রয়েছেন।

মঙ্গলবার (১ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আবদুল মজিদ এ আদেশ দেন।

২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ২৪ জনের নামে কোতোয়ালী থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সব আসামির অব্যাহতি পাওয়ার বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, মামলার ঘটনা অনেক পুরোনো। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদেরও আমরা এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছিলাম। যাদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে, তারা নিয়ম মেনে আবেদন করে সরকারি কোষাগারে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে দোকান বরাদ্দ পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে সিটি করপোরেশন দোকানগুলো ভেঙে দিলেও টাকা ফেরত দেয়নি। উল্টো তাদের দুদকের মামলায় আসামি হতে হয়েছে।

এ আইনজীবী আরও বলেন, মঙ্গলবার অভিযোগ গঠনের নির্ধারিত দিনে শুনানিতে আমরা আদালতকে বিষয়টি বুঝাতে সমর্থ হয়েছি। আদালত আসামিদের অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

আদেশের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে আদালতে দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অব্যাহতি পাওয়া ২০ আসামি হলেন, নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকার মৃত ফারুক আহমদ চৌধুরীর ছেলে মো. জাহেদুল আলম চৌধুরী, পাঁচলাইশ থানাধীন সোনাপুর এলাকার মৃত আহমদ হোসেন চৌধুরীর ছেলে খোরশেদ আলম চৌধুরী, গরীবউল্লাহ শাহ হাউজিং সোসাইটির মৃত নবাব মিয়া চৌধুরীর ছেলে বখতিয়ার উদ্দিন খান, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির এম এ মজিদের ছেলে এ এম মাইনুল হক ও তার স্ত্রী মিসেস নাজনীন সুলতানা, লালখান বাজার চাঁনমারী রোড এলাকার বদিউল আলমের ছেলে মোবারক উল্লাহ, পাঁচলাইশের নাজিরপাড়া সুন্নিয়া মাদরাসা দাম্মাপুকুর পাড়ের মো. ছায়দুল হকের ছেলে নেজামুল হক, মুরাদপুর এলাকার শাহজাহান খন্দকারের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ মুহুরী বাড়ির (বর্তমানে ১নং দক্ষিণ খুলশী) মৃত নুর হোসেনের ছেলে মো. ইউনুস, পাঁচলাইশের মুরাদপুর পিলখানা এলাকার মৃত মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে শেখ সোহরাওয়ার্দী, দামপাড়া পল্টন রোডের মাহতাব চৌধুরীর (বর্তমান নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি) ছেলে ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি মুন্সেফ বাজার সিকদার পাড়া এলাকার মৃত একরামুল হকের ছেলে মো. এরশাদুল হক, খুলশী থানাধীন জাকির হোসেন রোড পূর্ব নাসিরাবাদের মৃত আবদুর রহমান ভূঁইয়ার স্ত্রী মিসেস হাসিনা ভূঁইয়া, পাঁচলাইশের ও আর নিজাম রোডের মেহেদীবাগ এলাকার মৃত হাজী দুদু মিয়ার স্ত্রী নুর নাহার বেগম, কোতোয়ালী থানাধীন হরেশ চন্দ্র মুন্সেফ লেইনের আবুল খায়েরের ছেলে হাসান মুরাদ, পাঁচলাইশ থানাধীন খতিবের হাট এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম, এনায়েত বাজার এলাকার নুরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, পটিয়া থানাধীন মুন্সেফ বাজার এলাকার আবুল হাশেমের স্ত্রী গোলমান আরা বেগম, বাকলিয়া ডিসি রোডের মো. শহিদুল আলমের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা বেগম মিনু এবং ফেনী সদর থানার শিলুয়া গ্রামের মুন্সী মিয়ার ছেলে মাহবুব মিন্টু।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, নগরীর মুরাদপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্মিত ২৩টি দোকান ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়। পত্রিকায় টেন্ডার ছাড়া, যাচাই-বাছাই ছাড়া দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর দুদকের তৎকালীন পরিদর্শক সামছুল আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করেন।

মামলার বাদী প্রথমে আদালতে সাক্ষ্য স্মারক জমা দেন। পরে সামছুল আলম বদলি হলে মামলাটি দুদকের আরেক পরিদর্শক মো. মবিনুল ইসলাম তদন্ত করে তিনিও আদালতে সাক্ষ্য স্মারক জমা দেন। তার বদলিতে সংস্থাটির আরেক পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম আগের দুই তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য স্মারক পর্যালোচনা করে ২০০৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

পরবর্তী সময়ে মামলার প্রধান আসামি সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ২০০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মামলাটির কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর রিট পিটিশন সংক্রান্ত রুল খারিজ করে মামলার কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন হাইকোর্ট। এরপর শুরু হয় মামলার বিচার কার্যক্রম।

২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। আদালতের নির্দেশে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম ২০২১ সালের ২২ আগস্ট আদালতে অধিকতর প্রতিবেদন জমা দেন।

অভিযোগপত্রে কেবিএম সিরাজ উদ্দিন, হাফেজ আহমদ ও খায়রুল আনোয়ার মৃত্যুবরণ করায় তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়। এর আগে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ায় ২০১৮ সালের ৩০ মে আদালত তাকেও অব্যাহতি দেন।

এরপর এজাহারভুক্ত ২০ আসামি মূল বেনিফিশিয়ারি হিসেবে ২০টি দোকানের পজিশন নিয়ে ১৯৪৭ সালের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন এবং তার সাথে পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা।

এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।