শরীফের বিষয়ে আইনজীবীদের চিঠি, সংক্ষুব্ধ হলে রিট করতে বললেন আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৪৫ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত মো. শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় আদেশের আরজি জানিয়েছে হাইকোর্টে চিঠি দেওয়া আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেছেন— এ ঘটনায় সংক্ষুব্ধ হলে রিট করুন। বিস্তারিত যুক্তি দিয়ে আবেদন (রিট) নিয়ে আসেন। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শুনানি করার জন্য উপস্থাপন করা হলে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ চিঠির বিষয়ে রিট করার কথা বলেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর দুদক কর্মকর্তার পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

এ সময় আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সংক্ষুব্ধ হলে বিস্তারিত যুক্তি দিয়ে আবেদন (রিট) নিয়ে আসেন। এর পরে আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের জানান, তারা এ বিষয়ে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রিট করবেন।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপসহকারী পরিচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত মো. শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় আদেশের আরজি জানিয়েছে হাইকোর্টে চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়।

আবেদনকারী ১০ আইনজীবী হলেন- মোহাম্মদ শিশির মনির, রেজওয়ানা ফেরদৌস, জামিলুর রহমান খান, উত্তম কুমার বণিক, মুস্তাফিজুর রহমান, মো. তারেকুল ইসলাম, আহমেদ আবদুল্লাহ খান, সৈয়দ মোহাম্মদ রায়হান, মো. সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নওয়াব আলী।

চিঠিতে শরীফ উদ্দিনের ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শাতে এবং শরীফ উদ্দীনের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

২০ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী শিশির মনির বলেন, সদ্য বরখাস্তরা দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। ওইসব প্রতিবেদন যুক্ত করে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪(২) বিধি অনুযায়ী উপ-সহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। শরীফ উদ্দিন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পটুয়াখালীতে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

তার আগে সাড়ে তিন বছর তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে। সেখানে থাকাকালে কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা দুর্নীতির ঘটনায় ১৫৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন তিনি, যেখানে অ্যাডমিন ক্যাডার ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও ছিলেন।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক, সেসব মামলার বাদী ছিলেন শরীফ। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদ দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচিত হন শরীফ উদ্দিন।

এছাড়া অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ স্থানান্তর ও নতুন সংযোগ প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) বিভিন্ন অভিযোগ নিয়েও তদন্ত করেন শরীফ।

পরে অভিযোগের ‘সত্যতা পেয়ে’ কেজিডিসিএলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজনকে আসামি করে গত বছরের ১০ জুন মামলা করেন শরীফ।

এরপর আলোচিত মামলা দায়েরের পর চট্টগ্রাম থেকে শরিফ উদ্দিনকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। সবশেষে জীবননাশের হুমকি পাওয়ার ১৬ দিনের মাথায় শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হলো।

তবে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতর পর দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য যতো রকমের কাজ করা যায়, একটাও বাকি রাখেননি শরীফ উদ্দিন।

দুদকের সচিব বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের যে আইন রয়েছে এবং দুর্নীতি দমন কর্মচারী চাকরিবিধি ২০০৮ রয়েছে। সে অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশনের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী বিধি অনুযায়ী যে বিধানাবলি মানা প্রয়োজন, শরীফ উদ্দিন সেগুলো না মেনে অব্যাহতভাবে বিধি পরিপন্থি কাজ করে যাচ্ছিলেন। যার কারণে কমিশন মনে করেছে, কমিশনের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালমান রয়েছে। এর আগে তদন্তকালে টাকা উদ্ধার বিষয়ে উনি যে কার্যক্রম করেছিলেন, সে বিষয়ে হাইকোর্ট থেকেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। মানে সবকিছু মিলিয়ে চাকরিবিধি পরিপন্থির কারণে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এবং কয়েকটি সমন্বিত জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ে সামনে মানববন্ধন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এফএইচ/এমএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।