খালাস চেয়ে ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের আপিল
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলী খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছেন।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন আসামিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
তিনি বলেন, সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করা হয়। আপিলে নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল।
এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এই দুই আসামি বর্তমানে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।
এদিকে সিনহা হত্যা মামলায় ছয়জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তারা হলেন প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত ও বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব এবং টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
এছাড়া বাকি সাতজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। তারা হলেন বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।
প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত। কক্সবাজারের র্যাব-১৫ মামলাটির তদন্তভার পায়।
ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর ২০২১ সালের ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসেন।
এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এরপর দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও আইনজীবীর যুক্তিতর্ক শেষে রায় দেওয়া হয় বহুল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের।
এফএইচ/জেডএইচ/এমএস