৫৬ চেম্বার-৩২ এজলাস নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আধুনিক ভবন
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টকে আধুনিক ও নান্দনিক করতে ১২ তলা ভবন নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সেই ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে রং, ধোয়া-মোছা, ফার্নিচার বসানো ও কক্ষে কক্ষে সাজসজ্জার কাজ। এসব শেষ হলেই ভবনটিতে শুরু হবে কর্মযজ্ঞ। এতে নান্দনিক পরিবেশের পাশাপাশি কাজেও গতি বাড়বে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স এক্সটেনশন (বর্ধিত) ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫৮ কোটি চার লাখ ২২ হাজার টাকা। যার পুরোটাই বহন করছে সরকার। এনেক্স ভবনের পশ্চিম পাশে ১৮ হাজার ১৩৪ বর্গমিটার জায়গায় নির্মিত হচ্ছে এ ভবন।
এতে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, বিচারপতিদের জন্য ৫৬টি চেম্বার, ৩২টি এজলাস কক্ষ (কোর্ট রুম), আলাদা দুটি লিফট, আধুনিক জেনারেটর ও দোতলা বিদ্যুতের সাব-স্টেশন।
এছাড়া এই ভবনে ৩২টি ডিভিশন বেঞ্চ ও বিচারপতিদের চেম্বার ছাড়াও ২০টি অফিসকক্ষ এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দাপ্তরিক কক্ষ স্থাপন করা হবে।
জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট- এই দুই বিভাগে বিচারকাজ পরিচালিত হয়ে আসছে। এর মধ্যে হাইকোর্টে নিম্ন আদালতের মামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিচে স্তূপ করে রাখা হয়।
এতে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। এছাড়া বেশিরভাগ বিচারপতির নিজস্ব চেম্বার নেই। ফলে এজলাসে বসে নিয়মিত বিচারকাজ পরিচালনা ব্যাহত হয়। এসব সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ নেওয়া হয় ১২ তলা ভবন নির্মাণের।
এই ভবনে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, বিচারপতিদের জন্য চেম্বার, এজলাস কক্ষ
এরপর ২০১৮ সালে শুরু হয় প্রকল্পটির কার্যক্রম। ওই বছরের ৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় অনুমোদন মেলে প্রকল্পের। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে শুরু হয় নির্মাণকাজ। মূল কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর। আইন ও বিচার বিভাগ এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।
তখন বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হবে প্রকল্পের কাজ। কিন্তু মহামারির কারণে কাজ পিছিয়ে পড়ে। সবশেষ গত বছর শেষ হয় ভবন নির্মাণ।
প্রকল্পটির আওতায় একটি ১২ তলা ভবন, দোতলা সাব-স্টেশন ভবন, জেনারেটর, এয়ারকুলার, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনসহ আসবাবপত্র রয়েছে।
১২ তলা ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১৫৮ কোটি চার লাখ ২২ হাজার টাকা
এদিকে সরকারের এই উদ্যোগকে বিচারপ্রার্থী ও বিচার বিভাগের জন্য সুখবর বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনের পশ্চিম পাশে কোর্ট ভবন তৈরি করা হয়েছে। দেশে যেহেতু জনসংখ্যা ও মামলার সংখ্যা বেড়েছে, সে অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আদালতের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। এজন্য আদালতের সংখ্যা (হাইকোর্টের এজলাস কক্ষ) বাড়ানো হচ্ছে। সেটি মাথায় রেখে বিচাকের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে মামলা জটটা কমাতে হবে। দেশের মানুষের দ্রুত বিচার পাওয়ার জন্য আমাদের কোর্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এজন্যই এটা করা হয়েছে। এটি সরকারের একটি সফলতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুপ্রিম কোর্টের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এখন বিদ্যুতের কাজ চলছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) থেকে সংযোগ দেওয়ার পরই বিদ্যুৎ আসবে। আর রোস্টারের কিছু কাজ চলছে। এরপর খুব শিগগির ভবনে বিচারপতি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শিফট করা হবে।
তিনি বলেন, ভবনটি হওয়ায় উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করতে বিচারক-আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের স্থান সংকট দূর হবে।
এফএইচ/জেডএইচ/এএ/জেআইএম