‘স্বাধীনতার পর দেশে ছিলেন না নিজামী’


প্রকাশিত: ০৯:৫১ এএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৬

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চূড়ান্ত রায়েও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী স্বাধীনতার পর দেশে ছিলেন না বলে জানিয়েছে তার পরিবার। জামায়াত প্রধানের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তার শিক্ষা জীবনের বড় অংশই কেটেছে মাদরাসায়। শুরুতে বাংলা মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক শেষ করেন। ষাটের দশকের শেষে কামিল পাসের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন।

নিজামীর ছেলে নকিবুর রহমান জানিয়েছেন, তার বাবার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাবনা জেলার সাথিয়া উপজেলা এলাকায়। যদিও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পাবনার সাথিয়ার সাধারণ মানুষ দীর্ঘ সময় তাদের এলাকায় মতিউর রহমান নিজামীকে দেখেননি বলে জানা গেছে।

জেনারেল এরশাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় জামায়াতে ইসলামী সাথিয়াসহ পাবনা অঞ্চলে আবারো সংগঠনকে শক্তিশালী করেন তিনি। এরই মধ্যে নিজামী জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল হলেও সাথিয়া-বেড়া এলাকায় মাঠপর্যায়ে তার সরাসরি কর্মকাণ্ড শুরু হয় এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।

সাথিয়ার যে ইউনিয়নে তার বাড়ি, সেই ধোপাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, তিনি নিজেও নির্বাচনের সময়ই জানতে পারেন নিজামীর বিষয়ে। ১৯৯১ সালে নিজামী সাথিয়া এবং বেড়া থানার নিয়ে পাবনা-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালে জামায়াত-বিএনপির সাথে জোটে করে একই আসন থেকে জয়ী হয়ে প্রথমে কৃষি এবং পরে শিল্পমন্ত্রী ছিলেন।

নিজামীর পরিবার আরো জানায়, ষাটের দশকে তিনি মাদরাসার ছাত্র থাকার সময়ই জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। ৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নিজামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন।

ছেলে নকিবুর রহমান বলেন, তার বাবা ধাপে ধাপে মূল দল জামায়াতের আমির নির্বাচিত হন। গোলাম আযম জামায়াতের আমিরের পদ থেকে অবসর নেয়ার পর ২০০০ সালে ওই পদে আসেন মতিউর রহমান নিজামী। সেই থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি জামায়াতের আমির হিসেবে রয়েছেন।

তার বিরুদ্ধে বিচারে বড় অভিযোগ এসেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছাত্রসংঘের নেতা হিসেবে আল বদর বাহিনী গঠন করেছিলেন। আল বদর বাহিনীর বিরুদ্ধেই বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো সংঘটিত করার অভিযোগ রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে জামায়াত এবং ছাত্রসংঘের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকে দেশ ছেড়ে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামীও ছিলেন বলে জানা গেছে। তার পরিবারের দাবি, নিজামী ’৭৩ সালে গোপনে দেশে ফিরে রাজশাহী অঞ্চলে আত্মগোপনে ছিলেন।

মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ’৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম চলেছে ২০১২ সাল থেকে। অন্যদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিগত জোট সরকারের সময় নিজামী শিল্পমন্ত্রী থাকার সময় সরকারি সার কারখানার জেটিতে দশ ট্রাক পরিমাণ অস্ত্র আটকের যে ঘটনা ঘটেছিল, সেই মামলায় বিচারিক আদালত তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

এফএইচ/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।