নোয়াখালীতে গৃহবধূর শ্লীলতাহানি: ৩ পুলিশের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে নিজ ঘরে ধর্ষণচেষ্টা ও বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় থানার সেই সময়ের ওসি, এসআই ও এএসআইকে বরখাস্ত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ২৮ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে আজ তিন পুলিশ সদস্যের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
তিনি জানান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূকে নিজ ঘরে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ তিন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ওই তিন পুলিশ সদস্যের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে আবেদনটি শুনানির জন্য ২৮ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
বেগমগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছাড়া অন্যরা হলেন—উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মফিজুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ ও চৌকিদার আলী আসগর। পরে তিন পুলিশ সদস্য হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
এর আগে, গত ২৮ অক্টোবর এই ঘটনায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ, উপ-পরিদর্শক হাবিবুর রহমান (এসআই) ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মফিজুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ উল্লেখ করে গত ২৮ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো.কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় দেন। ওই দিন শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, অনীক আর হক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
এর আগে, গত বছরের ৫ অক্টোবর ঘটনাটি আদালতের নজরে আনার পর অনলাইন থেকে ফুটেজটি সরাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সিডি বা পেন ড্রাইভে কপি রেখে ভিডিও ফুটেজ সরাতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া ওই নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য নেওয়ায় পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি না তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন আদালত। কমিটিকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
আদালতের নির্দেশে কমিটির প্রধান ছিলেন চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো.আবুল বাশার। সদস্য ছিলেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসরাত সাদমীন ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী।
ওই কমিটি আদালতে প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে অবহেলা পাওয়ায় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় চৌকিদারের বিষয়ে আদালত যৌক্তিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারে বলে মত দিয়েছিলেন তদন্ত কমিটি। এরপর এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে আজ সেই আদেশ স্থগিত করে আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ২৮ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হলো।
এফএইচ/এআরএ/এমএস/জিকেএস