বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার: আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতিতে দ্রুত বিরোধ নিষ্পতি হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারও এডিআর পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। দেশে এডিআর পদ্ধতি সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে প্রচলিত আদালতের ওপর মামলার চাপ কমবে এবং এতে মামলাজটও কমবে।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর এক হোটেলে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক) আয়োজিত ‘ভার্চুয়াল বিশ্বে বিরোধ নিষ্পত্তিতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিয়াক এর ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার সরকার গঠন করে আরবিট্রেশন আইন, ২০০১ প্রণয়ন করেন। এছাড়া গত কয়েক বছরেও তার সরকার বেশ কিছু আইনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান সংযুক্ত করেছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, আদালতের বাইরেও বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার সকল সরকারি চুক্তিতে আরবিট্রেশন এবং মেডিয়েশনের জন্য উপযুক্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করার কথা বিবেচনা করছে। এছাড়া বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি উভয় আরবিট্রেশনের অ্যাওয়ার্ড কার্যকর করার পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
দেশের প্রথম এবং একমাত্র বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিয়াক ১০ বছর যাবৎ সমঝোতার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী জানান, বিয়াকের টিকে থাকার লক্ষ্যে এর অনুকূলে ১০ কোটি টাকা সরকারি অনুদান প্রদানের জন্য তিনি কাজ করছেন, যা এখন অর্থ বিভাগে প্রক্রিয়াধীন আছে।
কোভিড-১৯ এর চলমান সংকটে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতির ভার্চুয়াল শুনানিতে বিয়াকের অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। কোভিড-১৯ এর পরও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে এবং এর আওতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আদালতের বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন ২০২০’ প্রণয়ন করেছে এবং বিচার বিভাগ এ আইন এরই মধ্যে প্রয়োগ করা শুরু করেছে। বিচার বিভাগে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে সরকার ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প প্রণয়ন করছে।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বিয়াকের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি প্রসারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার অনেক আইনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করেছে।
তিনি বলেন, গত এক দশকে অনেক বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক বিরোধ সংক্রান্ত উদ্যোগে বিয়াকের সেবা প্রদানের মাধ্যমে এর চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির অনুশীলন প্রসারে বিয়াক সক্ষম হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে এই চাহিদা অব্যাহত থাকবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ. এফ. হাসান আরিফ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বলেন, কোভিড-১৯ মহামাীর বিরোধ নিষ্পত্তিসহ সকল ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও কতিপয় মহলের মানসিকতা পরিবর্তন না হওয়ায় সশরীরে এবং ভার্চুয়াল বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়েছে।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বিয়াকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ এ. (রুমী) আলী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবির, এবি ব্যাংক লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক আফজাল, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও হুমায়রা আজম, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বক্তৃতা করেন।
এফএইচ/ইএ/এএসএম