ইভ্যালি পরিচালনায় বিচারপতি মানিককে প্রধান করে কমিটি
অডিও শুনুন
আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে চেয়ারম্যান বা বোর্ডপ্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল কবির, (যিনি ওএসডিতে আছেন), চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসেন।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিষয়ে ওঠা প্রতারণার অভিযোগ ও পরিচালনার নিয়ম পর্যালোচনা করতে চার সদস্যের বোর্ড গঠনের নির্ধারিত দিনে এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে সোমবার (১৮ অক্টোবর) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এএম মাছুম ও ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম বদরুদ্দোজা।
এর আগে ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে ইভ্যালির সব নথি আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এরপরে হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ অক্টোবর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদ গঠন করার জন্য কমিটিতে এক সচিবের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সাবেক তিন সচিবের নাম হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে।
তারা হলেন- ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী, স্থানীয় সরকার (স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের) মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান ও সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব ইয়াকুব আলী পাটোয়ারী।
এরমধ্যে একজনকে রাখা হয় কমিটিতে। এছাড়া একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ও একজন আইনজীবী সিলেক্ট করেছেন আদালত।
এর আগে মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বোর্ড গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে তিনজনের নাম উল্লেখ করে প্রস্তাব আদালতে পাঠানোর জন্য বলেছিলেন। পরে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য বুধবার দিন ঠিক করা হয়।
ইভ্যালির দুই কর্ণধার কারাগারে থাকায় এ বোর্ড বা কমিটি গঠন করতে আদেশ দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবীরা।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর এক আদেশে ১২ অক্টোবরের মধ্যে ইভ্যালির নথিপত্র আদালতে দাখিল করতে রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। সে অনুযায়ী নথি দাখিল করা হয়।
আইনজীবী তাপস কান্তি বল বলেন, সব নথি দাখিল করা হয়েছে। যেহেতু এ কোম্পানির দুজন মালিকই জেলে, তাই একটি কমিটি গঠনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন আদালত। কমিটিতে তিনজনের নাম পাঠানোর জন্যে বলা হয়েছে। আমরা নাম পাঠাবো। এ বিষয়ে আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।
এর আগে এক গ্রাহকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব ধরনের সম্পদ বিক্রি এবং হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ৩০ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব ধরনের নথি তলব করা হয়।
আবেদনকারী ইভ্যালিতে গত মে মাসে একটি ওয়াশিং মেশিন অর্ডার করেন। অর্ডারের সময় তিনি অর্থ পরিশোধ করেন মোবাইল ফোনভিত্তিক ডিজিটাল আর্থিক সেবার মাধ্যমে। এরপর কোম্পানিটি অনলাইনে তাকে একটি পণ্য কেনায় ৩৩ হাজার ৩০৮ টাকার রশিদও দেয়।
কিন্তু এতদিনেও তারা পণ্যটি বুঝিয়ে দেয়নি। পণ্য বুঝে পেতে আবেদনকারী যোগাযোগ করলে তাকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়, কিন্তু পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি কিংবা টাকাও ফেরত দেয়নি। পরে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ই-ক্যাব, ভোক্তা অধিকারে কয়েকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন এবং হাইকোর্টে কোম্পানিটির অবসায়ন চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে ইভ্যালি লিমিটেড, রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, কনজুমার রাইটস প্রটেকশন ব্যুরো, নগদ, বিকাশ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ই-ক্যাব অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বেসিস, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য সচিবকে বিবাদী করা হয়।
এফএইচ/জেএইচ/জিকেএস