গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় রাজাকাররা


প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার আতকাপাড়া গ্রামের সাহেদ ফকির, আবু আনিছ ফকির, ও আলী আকবর মাস্টারের বাড়িসহ ২০ থেকে ২৫টি বাড়ি পুড়িয়ে ছিলো স্থানীয় রাজাকাররা। সোমবার ট্রাইব্যুনালে এমন ঘটনার বর্ণনা দেন রাষ্ট্রপক্ষে আনা প্রসিকিউশনের দুই সাক্ষী।

প্রসিকিউশনের ২১ সাক্ষী মো. মুসলিম (৬৮) ও ২২ তম সাক্ষি মো. সুরুজ আলী (৬৫) এসব ঘটনার বর্ণনা দেন আদালতে।

প্রসিকিউশনের দুই সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করার পরে এই মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের রাজাকার শামসুদ্দিন আহমেদসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষীর জেরার কাযক্রম শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। জেরা শেষে মামলার কাযক্রম আগমী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতিব করেন।

সোমবার ট্রাইব্যুনাল এর সদস্য বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরার কার্যক্রম শেষ করেন।  

এদিন আদালতে সাক্ষীকে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। পরে সাক্ষীদের জেরা করেন পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে নিয়োজিত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান এবং আটক শামসুদ্দিনের আইনজীবী মাসুদ রানা।  

সাক্ষীরা বলেন, একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত পলাতক রাজাকার কমান্ডার গাজী মো. আব্দুল মান্নানের নির্দেশে স্থানীয় ওইসব রাজাকারদের মধ্যে আটককৃত আসামি শামসুদ্দীন আহমেদ ছাড়াও পলাতক আসামি এটিএম নাসির, মো. হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলামসহ ১০/১৫ জন রাজাকার ছিলেন।

তারা বলেন, গ্রামের অধিকাংশ লোকই আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ায় রাজাকাররা এ গ্রামটিকে টার্গেট করেছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের দুই সাক্ষীই তাদের দেখা একই ধরনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে ভাদ্র মাসের শেষের দিকে কোনো একদিন সকাল দশটার দিকে এ মামলার আসামি রাজাকার কমান্ডার গাজী মো. আব্দুল মান্নান,  এটিএম নাসির, শামসুদ্দীন আহমেদ, মো. হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলামসহ ১০/১৫ জন রাজাকার আতকাপাড়া গ্রামে আসেন।
 
ওই গ্রামের ভেতর দিয়ে যে রাস্তাটি পার্শ্ববর্তী থানা তাড়াইলের দিকে গেছে সেখানে তারা অবস্থান নেন। এ সময় রাজাকার কমান্ডার আসামি গাজী মো. আব্দুল মান্নান অন্যান্য রাজাকারদের বলেন, ‘এই গ্রামটি মুক্তিযোদ্ধাদের আস্তানা, এটি পুড়িয়ে দাও’। নির্দেশ পাওয়ার পরই রাজাকাররা আতকাপাড়া গ্রামে অগ্নিসংযোগ শুরু করেন।
 
সাক্ষী দু’জনের মধ্যে একুশতম সাক্ষী মো. মুসলিম এ সময় ওই রাস্তার পাশে তার ফুফুর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকেই তিনি এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। তাছাড়া সাক্ষী দু’জনই সাক্ষ্যে বলেছেন যে, আসামিদের তারা আগে থেকেই চিনতেন।
 
আতকাপাড়া গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ছাড়াও সাক্ষী মো. মুসলিম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আরেকটি ঘটনার বর্ণনা দেন সাক্ষ্যে। সেখানে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে কোনো একদিন দুপুর ১২টার দিকে তিনি করিমগঞ্জ বাজারে যান।
 
বাজারের ফজলুর রহমান মাস্টারের দোকান থেকে জামা কিনে বাড়ি ফেরার পথে করিমগঞ্জ গোদারাঘাটে (খেয়াঘাট) এসে দেখেন ওই ফজলুর রহমান মাস্টারকেই আটক করে আসামি মো. আজহারুল ইসলাম, এটিএম নাসির, শামসুদ্দীন আহমেদ, হাফিজ উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন রাজাকার করিমগঞ্জ ডাকবাংলোর দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
 
পরবর্তীতে ফজলুর রহমান মাস্টারের ভাই বজলুর রহমানের কাছে তিনি শুনেছেন, টাকার বিনিময়ে ফজলুর রহমান মাস্টারকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
 
তার আগে ২০১৫ সালের ১৩ মে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন। গত ১২ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, লুণ্ঠন, নির্যাতনসহ সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিরা কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেরগুপ বিল, পীরাতন বিল ও আশেপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাঁচ আসামির মধ্যে অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ গ্রেফতার আছেন। তাকে সোমবার ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হজির করা হয়। অন্যদিকে মামলায় পলাতক চার আসামিরা হলেন- শামসুদ্দিনের সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবং রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, আজহারুল ইসলাম ও হাফিজ উদ্দিন।

এফএইচ/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।