কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ৪৯ গায়েবি মামলা, শুনানি কার্যতালিকা থেকে বাদ
রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলার নেপথ্যে রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমানের নাম উঠে এসেছে তদন্তে। হাইকোর্টের নির্দেশনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পক্ষ থেকে হাইকোর্টে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল।
এরপর রিট আবেদনকারী কাঞ্চনের বিরুদ্ধে চলমান সব মামলার বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সিআইডিকে তদন্ত করার আদেশসহ হাইকোর্টের সেই পুরো অন্তর্বর্তীকালীন আদেশটি স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে সিআইডির প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করতে গেলে আদালত শুনানি না করে সেটি কার্যতালিকা থেকে বাদ (ডিলিট) দিয়ে আদেশ দেন।
আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এমাদুল হক বসির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ও অরবিন্দ কুমার রায়। অপরদিকে পীরের পক্ষে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এম কে রহমান, অ্যাডভোকেট ওয়াজি উল্লাহ ও অ্যাডভোকেট শেখ ওমর শরীফ।
এর আগে এ বিষয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ জুন থানায় বা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করলে অভিযোগ দায়েরকারীর এনআইডি দেওয়া বাধ্যতামূলক বলে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুল জারি করে ৬০ দিনের মধ্যে ৪৯ মামলার ঘটনা তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রতন কৃঞ্চ নাথ।
ওই দিন আদেশের পর আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, যে কোনো মামলা বা অভিযোগ করার ক্ষেত্রে বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি লাগবে বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুল জারি করে ৬০ দিনের ৪৯ মামলার ঘটনা তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী এমাদুল হক বসির বলেছিলেন, ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় তিনি এক হাজার ৪৬৫ দিন জেলে খেটেছেন। কিন্তু একটি মামলারও বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় তিনি অনেক মামলায় খালাস পেয়েছেন। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপি, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (এসবি), অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (সিআইডি), র্যাব মহাপরিচালক, ঢাকার পুলিশ কমিশনারসহ ৪০ জনকে বিবাদী করা হয়েছিল।
পীরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ ওমর শরীফ জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সিআইডিকে তদন্ত করতে দেওয়ার আদেশসহ হাইকোর্টের সেই পুরো অন্তর্বর্তীকালীন আদেশটি রিট আবেদনকারী কাঞ্চনের বিরুদ্ধে চলমান সব মামলার বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে দিয়েছেন।
আজ (২১ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টে বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা আপিল বিভাগের আদেশের সার্টিফায়েড কপি দাখিল করেন।
আপিল বিভাগের আদেশ দেখে হাইকোর্ট মন্তব্য করেন, যেহেতু আবেদনকারীর বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের ওপর আপিল বিভাগ থেকে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। তাই এই মুহূর্তে এই রিট মামলায় অন্য কোনো আদেশ দেওয়া সম্ভব নয়। এই বলে হাইকোর্ট মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন।
এফএইচ/এআরএ/এএসএম