নিঝুম দ্বীপের বনাঞ্চলের সীমানা নির্ধারণে হাইকোর্টের নির্দেশ
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় নিঝুম দ্বীপের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ করার জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ছয় মাসের মধ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান বন সংরক্ষক এবং জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সীমানা নির্ধারণ করার আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন আদালত।
একই সঙ্গে নিঝুমদ্বীপ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা নির্ধারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের কারণ দর্শানোর রুল জারি করেছেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদেরকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
তবে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন স্থগিত রাখতে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনে কোনো আদেশ আদালত থেকে দেওয়া হয়নি। ফলে ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণে কোনো বাধা নেই। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
এ সংক্রান্ত এক রিটে সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গোলাম সরওয়ার পায়েল।
জনস্বার্থে মানবাধিকারকর্মী রফিক উদ্দিন এনায়েতের পক্ষে গত ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
রিটে ওই ইউপিতে নির্বাচন বন্ধের যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়েছে, নিঝুম দ্বীপের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ২০১২ সালের গেজেট অনুযায়ী, নিঝুম দ্বীপের সীমানা নির্ধারণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত রাখারও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান বন সংরক্ষক ও স্বরাষ্ট্র সচিবসহ ১৪ জনকে বিবাদী করা হয়।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ। চল্লিশের দশকে জেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে এ দ্বীপটি জেগে ওঠে। ১৯৭৪ সালে বন বিভাগ এ দ্বীপে বনায়ন শুরু করে। পরে এর প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য বিবেচনায় সরকার দ্বীপটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে।
রিটে বলা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে বন আইন, ১৯২৭-এর ২০ ধারায় সরকার পুরো নিঝুম দ্বীপকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করে। ফলে আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বন নিঝুম দ্বীপে জনসাধারণের অবাধ প্রবেশ ও কাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ।
২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নিঝুম দ্বীপের সংরক্ষিত বন নিয়ে ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে। যেটি সম্পূর্ণ বেআইনি। ২০১২ সালে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় দুটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিঝুম দ্বীপকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু এখনো সংরক্ষিত বনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি।
এ সুযোগে স্থানীয় অসাধু ভূমিখেকোরা নিঝুম দ্বীপের সংরক্ষিত বনের জমি অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন ধরনের কাঠামো নির্মাণ করে যাচ্ছে। এতে সাগরঘেরা দ্বীপটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ক্রমে হুমকির মুকে পড়ছে।
সরকারঘোষিত গেজেট অনুযায়ী, সংরক্ষিত নিঝুম দ্বীপকে রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর থেকে ইউনিয়ন পরিষদকে আলাদা করে পরিষদের সীমানা নির্ধারণের জন্য রিটের বাদী সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নিঝুম দ্বীপ রক্ষায় একাধিক রুল জারি করেন এবং নির্দেশনা দেন।
এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সীমানা নির্ধারণ বিষয়টি নিষ্পত্তি না করেই আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সেখানে ইউপি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে।
রিটে ২০১২ সালের গেজেট অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপের সীমানা নির্ধারণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত রাখতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এর আগে বিবাদীদের উদ্দেশ্যে লিগ্যাল (আইনি) নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাতেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবার রিট আবেদন করা হলো।
এফএইচ/এএএইচ/জিকেএস