৪৯ গায়েবি মামলা: তিন বাদীসহ ২০ জনের অস্তিত্ব পেয়েছে সিআইডি
ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে অর্ধশত ‘গায়েবি’ মামলার তিনজন বাদী ও সাক্ষীর নাম-ঠিকানাসহ পরিচয় পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
তারা চারটি মামলার বাদী এবং ১১টি মামলায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন বলে সিআইডির প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ওই তিনজন হলেন—শাখারুল কবীর ওরফে ইকবাল, ফারুকুর রহমান, মো. মফিজুল ইসলাম ওরফে জামাই মফিজ।
তাদের মধ্যে শাখারুল একটি মামলার বাদী এবং তিনটি মামলার সাক্ষী। আর ফারুকুর রহমান একটি মামলার বাদী এবং সাতটি মামলার সাক্ষী। এছাড়া মফিজুল দুটি মামলার বাদী এবং একটি মামলার সাক্ষী।
এছাড়া আরও অন্তত ২০ জন ব্যক্তি গায়েবি এসব মামলার সঙ্গে জড়িত বলেও উল্লেখ করেছে সিআইডি।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের আইনজীবী এমাদুল হক বসির জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সিআইডির এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন হাইকোর্ট এসে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে আগামী (১২ সেপ্টেম্বর) রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
হাইকোর্টে আসা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিট আবেদনকারীর বিরুদ্ধে ঢাকার ভেতরে ও বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৪৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি জিআর মামলা এবং ২৬টি সিআর মামলা। যার মধ্যে ৩৫টি মামলা থেকে আসামি একরামুল আহসান কাঞ্চন খালাস পেয়েছেন। খালাস পাওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ১৫টি জিআর এবং ২০টি সিআর।
বাকি ১৪টি মামলা বিচারাধীন। বিচার চলমান থাকা মামলাগুলোর মধ্যে আটটি জিআর এবং ছয়টি সিআর মামলা। এছাড়াও রিট পিটিশনে পক্ষভুক্ত ২০ জন ব্যক্তিসহ আরও অনেকের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা হাইকোর্টে আবেদনকারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় বাদী ও সাক্ষীর ভূমিকায় রয়েছেন।
এর আগে গত ১৪ জুন গায়েবি মামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তারই আলোকে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রতন কৃষ্ণ নাথের সই করা প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়।
ওইদিন হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছিল, থানায় বা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করলে অভিযোগ দায়েরকারীর ন্যাশনাল আইডিকার্ড (এনআইডি) দেওয়া বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে রুল জারি করার পাশাপাশি ৬০ দিনের মধ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অস্তিত্বহীন বাদীর করা ৪৯ মামলার ঘটনা তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
গত ১৪ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এমাদুল হক বসির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ও অরবিন্দ কুমার রায়।
রিটকারীর আইনজীবী এমাদুল হক বসির বলেন, রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় তিনি এক হাজার ৪৬৫ দিন জেলে খেটেছেন। কিন্তু একটি মামলারও বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় তিনি অনেক মামলায় খালাস পেয়েছেন। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপি, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (এসবি), অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (সিআিইড), মহাপরিচালক র্যাব, ডিএমপি কমিশনারসহ ৪০ জনকে বিবাদী করা হয়।
এফএইচ/এএএইচ/এএসএম