৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনকের ৭ মার্চের ভাষণের আঙ্গুল উঁচানোর ভাস্কর্য স্থাপনের জন্য বলেছেন আদালত। এছাড়া ভাস্কর্য স্থাপনের জন্য একটি কমিটি করতে বলা হয়েছে।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতির এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দীনের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী ড. মো. বশির আহমেদ।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী ড. মো. বশির আহমেদ।
আইনজীবী ড. বশির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের আগের আদেশ অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া জেলায় জেলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনে আগের আদেশ বাস্তবায়নেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকরেদ জানান, স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনকের ৭ মার্চের ভাষণের তর্জনী আঙ্গুল উঁচানোর ভাস্কর্য স্থাপনের জন্য বলেছেন আদালত। তবে, এখন এটা কোন পর্যায়ে, ক্যাটাগরি কি হবে তার জন্য একটা এক্সপার্ট কমিটি নির্ধারণ করে দেবে। কমিটিতে কারা থাকবেন সেটা রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে দাখিল করবে। এরপর আদালত কমিটি চূড়ান্ত করে দেবেন। আর এই কমিটি নির্ধারণ করে দেবে কোন পর্যায়ে বা কোন স্তরে ভাষণটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। স্কুল-কলেজ না আরও উপরে এটা কমিটি নির্ধারণ করে দেবে।
এর আগে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক বশির আহমেদ এ রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ৭ মার্চকে কেন ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
এছাড়াও একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্থানে, যে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছিলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল যে স্থানে সেই স্থানে মঞ্চ পুননির্মাণ কেন করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত।
৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘স্পিচ মোড’ (তর্জনী উচিয়ে ভাষণের সময়কার ভঙ্গি) এর ভাস্কর্য নির্মাণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না—তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।
সেই রুলের শুনানিতে রিট আবেদনকারীর সম্পূরক আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ৭ মার্চের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস অন্তর্ভুক্তির কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
মুজিববর্ষের মধ্যেই দেশের সব জেলা-উপজেলায় হেড কোয়ার্টার্সে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের নির্দেশসহ কয়েকটি নির্দেশনা দেন। ওইদিন ৭ মার্চকে ঐতিহাসিক জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন আদালত। এর মধ্যে ৭ মার্চকে দিবস ঘোষণার বিষয়টি গেজেটে প্রকাশ করা হয়।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ৭ মার্চকে ঐতিহাসিক জাতীয় দিবস ঘোষণা করতে নির্দেশ দেন আদালত।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে সম্পূরক আবেদনে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। আজ বুধবার এসব রুলের নিষ্পত্তি করেছেন হাইকোর্ট।
এফএইচ/জেডএইচ/এমএস/এমআরএম