জাপান থেকে আসা দুই শিশু আদালতে
দুই মেয়ে শিশু নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে জাপানি নারী নাকানো এরিকো হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের বিষয়ে শুনানি চলছে। আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে তাদের হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী আজ দুই শিশুকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক স্বামী শরীফ ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই মেয়ে সন্তানকে ফিরে পেতে গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নারী এরিকো। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আজ (৩১ আগস্ট) দুই শিশুকে আদালতে হাজির করতে তাদের বাবা ও ফুফুকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে আজ শুনানি হচ্ছে।
২২ আগস্ট দুই শিশুকে ইমরানের বারিধারার বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারপর থেকে তারা উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে ছিল।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর সিআইডির তত্ত্বাবধানে দুই শিশু আদালতে উপস্থিত করা হয়। শিশু দুটি এক সাথে আদালত কক্ষের দিকে যায়।
শিশু দুটি আসার কিছুক্ষণ পর আদালতে হাজির হন তাদের বাবা শরীফ ইমরান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, তিনি ও তার স্ত্রী এরিকো আজ সকালে উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে গিয়েছিলেন। শিশুদের মা এরিকোও আদালতে হাজির হয়েছেন।
হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ বিষয়ে আজ শুনানি হচ্ছে।
এরিকো পেশায় চিকিৎসক। তার আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনিরের তথ্যমতে, জাপানি আইন অনুসারে এরিকো (৪৬) ও ইমরান (৫৮) ২০০৮ সালের ১১ জুলাই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। এক যুগের দাম্পত্যজীবনে তাদের তিন মেয়েসন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে তাদের বয়স যথাক্রমে ১১, ১০ ও ৭ বছর। তিন মেয়ে টোকিওর একটি স্কুলে পড়ছিল। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। গত ২১ জানুয়ারি ইমরান টোকিওর স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার এক মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। তবে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের আবেদন নাকচ করে।
শিশির মনির বলেন, পরবর্তী সময়ে স্কুলবাসে করে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপেজ থেকে ইমরান বড় দুই মেয়েকে (১১ ও ১০) অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরিকো ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। তবে এই আদেশ ভঙ্গ করে ইমরান শুধু একবার মায়ের সঙ্গে বড় দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরিকোর আইনজীবী জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে বড় দুই মেয়ের জিম্মা হস্তান্তরে আদেশ দেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এরিকো এত দিন বাংলাদেশ আসতে পারেননি। ছোট মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন এরিকো।
এফএইচ/জেএইচ/এমএস