হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুই সহযোগী তিন দিনের রিমান্ডে
ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন ও সানাউল্ল্যাহ নূরীর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (৪ আগস্ট) তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর পল্লবী থানায় দায়ের করা প্রতারণার মামলার সুষ্ঠুতদন্তের জন্য তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের দুজনকে আটক করা হয়।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) হেলেনা জাহাঙ্গীরের অন্যতম সহযোগী হাজেরা খাতুন ও সানাউল্ল্যাহ নূরীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংউইয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, স্যাটেলাইট টেলিভিশনের অনুমতি না নিয়েই হেলেনা জাহাঙ্গীরের জয়যাত্রা টিভি ২০১৮ সাল থেকে হংকংয়ের একটি ডাউনলিংক চ্যানেল হিসেবে সম্প্রচার হয়ে আসছিল। যার ফ্রিকোয়েন্সি হংকং থেকে বরাদ্দ করা হয়। ফ্রিকোয়েন্সির জন্য হংকংকে মাসে প্রায় ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করতে হতো। হংকং থেকে বরাদ্দ ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্প্রচারের কোনো বৈধ অনুমোদন নেই।
তিনি বলেন, হাজেরা খাতুন ২০০৯ সালে কুমিল্লার একটি কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন মিরপুরে একটি গার্মেন্টে অ্যাডমিন (এইচআর) পদে চাকরি শুরু করেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নিকটাত্মীয় এবং একইসঙ্গে কর্মদক্ষতা শুনে হেলেনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে উঠেন।
এর ফলে ২০১৬ সালে তিনি ‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন’ এর ডিজিএম হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ২০১৮ সালে জয়যাত্রা টিভি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জিএম (অ্যাডমিন) পদে নিযুক্ত হন। হাজেরা মূলত দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ হেলেনার আর্থিক বিষয়াদি দেখভাল করতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান।
এ সম্পর্কে হাজেরা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানায়, জয়যাত্রা টিভি ২০১৮ সাল থেকে হংকংয়ের একটি ডাউনলিংক চ্যানেল হিসেবে সম্প্রচার হয়ে আসছে। যার ফ্রিকোয়েন্সি হংকং থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে। ফ্রিকোয়েন্সির জন্য হংকংকে মাসে প্রায় ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করতে হতো।
তিনি বলেন, সম্প্রচারের জন্য ক্যাবল ব্যবসায়ীদের কাছে রিসিভার জয়যাত্রা টিভি বা তার প্রতিনিধির মাধ্যমে ক্যাবল ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। প্রতিনিধিরা ক্যাবল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সম্প্রচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে চাকুরিচ্যুত করা হত। বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি জেলায় সম্প্রচারিত হয়ে থাকে এই জয়যাত্রা টিভি। টিভি চ্যানেলটি রাজধানী ও জেলা পর্যায়ের পাশাপাশি মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিকল্পনা নেয়া হয়। যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অধিকসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা যায়।
জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন সম্পর্কে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ফাউন্ডেশনে ডোনার, জেনারেল মেম্বার, লাইফ টাইম মেম্বার ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে অর্থ সংগ্রহ করা হত। এই সংগঠনের প্রায় ২০০ জন সদস্য রয়েছে। যাদের কাছ থেকে সদস্যপদ বাবদ বিশ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। যা সামান্যই মানবিক কাজে ব্যবহার করে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা-চালানো হতো। অবশিষ্ট অর্থ তার সন্তানদের নামে সঞ্চয় করা হত বলে হাজেরা জানান।
সানাউল্ল্যা নুরী জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নির্দেশনায় প্রতিনিধিদের সমন্বয় করতেন। প্রতিনিধিদের কেউ মাসিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতেন। এলাকাতে তার নামে চাঁদাবাজি অভিযোগ রয়েছে। তিনি গাজীপুর গার্মেন্ট সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে তার একটি অংশও জয়যাত্রা টিভিকে দিতেন বলে জানান। এছাড়াও তিনি গাজীপুর ও আশপাশের এলাকার অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচার নিশ্চিত করতেন।
জেএ/এসএইচএস/এমএস