‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগ্নের দুর্নীতি’র বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মায়ের নামে গোপালগঞ্জে নির্মাণাধীন শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগ্নের ‘দুর্নীতি’র ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) জনস্বার্থে আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিচুর রহমানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম. আনিসুজ্জামান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট করেন। রিটের বিষয়টি জাগো নিউজকে এম. আনিসুজ্জামান নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল একক বেঞ্চে রিট আবেদনটি জমা দেয়া হয়েছে। রিট আবেদনে উক্ত ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার আরজি জানানো হয়েছে।
রিটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র অর্থ সচিব (অর্থ বিভাগ), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগ), স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও পরিচালক (অর্থ), গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, দুদক চেয়ারম্যান এবং বিডি থাই কসমো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৯ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে ‘হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগ্নের দুর্নীতি, বাথরুম লাইটের দাম ৩৮৪৩ টাকা’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে এ বিষয়ে গত ১৫ জুলাই আনিচুর রহমানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম. আনিসুজ্জামান বিবাদীদের প্রতি একটি নোটিশ প্রদান করেন। তবে সে নোটিশের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়- গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর মায়ের নামে তৈরি শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের বাতি কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যেখানে ১৫ ওয়াটের বাথরুম লাইট কেনা হয়েছে ৩ হাজার ৮৪৩ টাকায়। ১৮ ওয়াটের সারফেস ডাউন লাইট কেনা হয়েছে ৩ হাজার ৭৫১ টাকায়। এরকম ২৪টি সরঞ্জাম তাদের সরবরাহ করা কথা রয়েছে।
নির্মাণাধীন সরকারি হাসপাতালে এমন দরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগ্নের প্রতিষ্ঠান বিডি থাই কসমো লিমিটেড (কসমো লাইটিং)।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পিডব্লিউডির তালিকাভুক্ত না হলেও এসব সরঞ্জাম সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের চাপেই তাদের কাজ দেয়া হয়েছে বলে দাবি মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের। তবে সুপারিশের কথা অস্বীকার করেছে স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো নির্মাণ তদারকি প্রতিষ্ঠান এইচইডি। আর মোট দরের ওপর পরে ছাড় দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে কসমো।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, দরপত্রে উল্লিখিত এসব পণ্যের বেশিরভাগের খুচরা দাম অর্ধেকের কম। কোনোটি প্রস্তাবিত দরের এক তৃতীয়াংশ। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত দর কসমো থেকে অনেক কম। কসমো যে বাথরুম লাইটের দাম দিয়েছে ৩ হাজার ৮৪৩ টাকা আরেক প্রতিষ্ঠান তা প্রস্তাব করেছে ৭১৫ টাকা।
এছাড়া গণপূর্ত অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ফিটিংসহ এসব সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য পিডব্লিউডির তালিকাভুক্তই নয় বিডি থাই কসমো নামে প্রতিষ্ঠানটি। তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আবেদন করলেও এখনো অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি প্রতিষ্ঠানটির। এরপরও কসমোকেই কাজ দেয় মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন।
সরাসরি কথা বলতে না চাইলেও প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা টেলিফোনে গণামধ্যমকে জানান, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফরের সিলেকশনেই সব হয়েছে। আর কসমোর হয়ে সুপারিশের বিষয়টি অস্বীকার করেন এইচইডির বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী।
এদিকে, বিডি থাই কসমোর মালিক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগ্নে রায়ান হামিদ বলেন, ‘নিয়ম মেনেই সব হয়েছে।’ তার কোম্পানিটি পিডব্লিউডির তালিকাভুক্ত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এফএইচ/এমআরআর/এএসএম