আপনি আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল : প্রধান বিচারপতিকে ব্যারিস্টার সুমন
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে উদ্দেশ্য করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছেন, ‘আপনি হলেন আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। সকল আইনজীবীর পক্ষ থেকে আপনার প্রতি দাবি, ভার্চুয়ালি হলেও সবগুলো কোর্ট খুলে দিন।’
তিনি বলেন, ‘করোনা শুরুর পর থেকে প্রায় দুই বছর ধরে আইনজীবীদের ইনকাম নেই। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এ অবস্থায় আইনজীবীদের একটু নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করুন। অন্তত ভার্চুয়ালি সবগুলো কোর্ট খুলে দিন।’
সোমবার (২ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (বার অ্যাসোসিয়েশন) ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ফেসবুক লাইভে এসে ব্যারিস্টার সুমন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘করোনা শুরুর পর থেকে প্রায় দুই বছর ধরে আইনজীবীদের ইনকামের খুব একটা ব্যবস্থা নেই। কারণ কোর্ট তো ঠিকমত চলছে না। এই কোর্টে বিভিন্ন লোকজন আছেন। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি শ্রেণির লোকজন আছেন। আমরা আইনজীবীরা কোনো বেতন পাই না। আমরা ক্লায়েন্টদের আইনি সহায়তা দেয়ার কারণে তাদের থেকে একটা ফি পাই। এই ফি’র টাকা দিয়েই আইনজীবীদের সংসার চলে। এটাই আইন পেশার বড় বাস্তবতা। আমাদের অবস্থা এত খারাপ যে আমরা আইনজীবীরা সাধারণত চেষ্টা করি বাইরের মানুষ যেন এসব কষ্টের কথা না জানে। কিন্তু যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন আর করার কিছু থাকে না। আইনজীবীদের সেই অবস্থা হয়ে গেছে।’
এসময় লাইভে ব্যারিস্টার সুমনের পাশে থাকা সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজ মোহাম্মদ শেখ বলেন, ‘জেলা জজ থেকে অবসরের পর ১৩ বছর ধরে আইন পেশায় আছি। সবকিছু ভালোই চলছিল। করোনার কারণে সবকিছু থমকে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাঝে ভিডিও কনফারেন্সে কোর্ট ভালোভাবেই চলছিল। আসলে জীবন ও জীবিকা একসঙ্গে চলতে হবে। এটার ব্যালেন্স করতে হবে। আমি সত্য কথা বলছি, বলা ঠিক হবে কিনা জানি না। আজকে সকালবেলা আমার মিসেস বললেন, বাজারের টাকা দরকার। তখন আমার পকেটে মাত্র ১২ টাকা। আমি বললাম, আমি কোর্টে যাচ্ছি। আশা করি কিছু ইনকাম হবে। কিন্তু কোর্টে আসলাম, মক্কেল নাই। আর কেনই বা মক্কেল আসবে। কোর্ট-কাচারি তো হয় না। যখন জানবে কোর্ট শুরু হয়েছে ভিডিও কনফারেন্সে বা নরমাল কোর্ট হচ্ছে তখন মক্কেল টাকা দেবে।’
‘আর একটি কথা, এই হাইকোর্টে আট হাজার আইনজীবী আছেন। তার মধ্যে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়তো সর্বোচ্চ এক হাজার আইনজীবী আছেন। আর যে সাত হাজার আইনজীবীর ফ্যামিলি আছে, ছেলেমেয়ে আছে তারা কী খাবে?’ যোগ করেন তিনি।
কারাগারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কারাগারে যারা আছেন, বড় ধরনের অপরাধী ছাড়া নিরীহ আসামিরা তো জামিনে বের হতে পারছেন না। তাদেরও তো ফ্যামিলি আছে। তাই আমি প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাই, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হলেও সব কোর্ট খুলে দিন।’
এরপর আবার কথা বলেন ব্যারিস্টার সুমন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিভাবক প্রধান বিচারপতি। তার কাছে আমাদের নিবেদন থাকবে আমাদের আইনজীবীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বেশিরভাগ আইনজীবীর ইনকাম বলতে কিছু নেই। এখন আপনার কাছে চাওয়া ছাড়া আমাদের আর পথ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আইন পেশা থেকে যেহেতু আপনি প্রধান বিচারপতি হয়েছেন, নিশ্চয়ই আপনি জানেন আইনজীবীদের সম্মান রক্ষা করার জন্য কী কী করতে হবে। আপনাকে অ্যাডভাইস করার কিছু নেই। শুধু এইটুকু বলতে চাই, আপনি আমাদের অভিভাবক। আল্লাহর পরে আপনিই আমাদের রক্ষা করবেন। এই রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে আপনি একটা ব্যবস্থা নেবেন। যেন আমরা কিছু নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।’
এফএইচ/ইএ/জিকেএস