আবেদন মুলতবি, সংশ্লিষ্ট আদালতকে জানাবেন সাঈদীর আইনজীবী
জাকাতের অর্থ আত্মসাতের মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে করা রিভিশন আবেদনের শুনানি আগামী দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বিচারিক (নিম্ন) আদালতে আগামী ৭ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য রয়েছে। কিন্তু মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন। আদালত শুনানি মুলতবি করেছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আইনজীবী বিচারিক আদালতকে অবহিত করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের দুই সপ্তাহের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সরোয়ার হোসেন বাপ্পী। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন মো. খুরশিদ আলম খান। সাঈদীর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক ও মো. মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সরোয়ার হোসেন বাপ্পী।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম। হাইকোর্টের শুনানি দুই সপ্তাহের জন্যে মুলতবি করা হয়েছে। হাইকোর্টে মুলতবির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতকে জানাবেন সাঈদীর আইনজীবী।’
এর আগে জাকাতের অর্থ আত্মসাতের মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়টি বাতিল চেয়ে গত ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করেন আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
তিনি বলেন, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফার) জাকাতের অর্থ আত্মসাতের মামলায় বিচারিক আদালতে সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল এবং অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে এ আবেদন করা হয়েছে। এর পরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়েছে। আজও সে বিষেয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। ধার্য দিনে এ বিষয়ে শুনানি মুলতবি করা হয়।’
এর আগে গত ১১ জানুয়ারি রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক সৈয়দা হোসনে আরা অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ মামলা নিম্ন আদালতে আগামী ৭ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে আদালত।
মামলায় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ মোট ছয়জন আসামি রয়েছেন। অপর পাঁচ আসামি হলেন- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল হক, মসজিদ কাউন্সিল ফর কমিউনিটি অ্যাডভান্সমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বন্ধুজন পরিষদের প্রধান সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস, ইসলামী সমাজকল্যাণ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল হক।
আসামিদের মধ্যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কারাগারে আছেন। আবুল কালাম আজাদ ও আব্দুল হক পলাতক রয়েছেন। অপর তিন আসামি জামিনে রয়েছেন। এ মামলায় সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছিল। তবে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন শাহজাহান মারা যাওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আইয়ুব আলী চৌধুরী ২০১০ সালের ২৪ মে শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার নথি অনুযায়ী, জাকাতের ১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ২০১০ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অর্থ ও হিসাব বিভাগের তৎকালীন পরিচালক আইয়ুব আলী চৌধুরী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ২৯ জুন সাঈদীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।
এফএইচ/ইএ/জিকেএস