পি কে হালদার পালিয়েছেন বেনাপোল দিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪৮ পিএম, ০১ মার্চ ২০২১

প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইমিগ্রেশন শাখা।

২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান পি কে হালদার। যদিও পালিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই পি কে হালদার যাতে বিদেশ যেতে না পারেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এমন চিঠির কপি পায় বেনাপোল স্থলবন্দরে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন পুলিশ।

সোমবার (১ মার্চ) বিকেলে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পি কে হালদার যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য এসবি পুলিশকে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর চিঠি দেয় দুদক। ইমিগ্রেশন পুলিশকে সতর্ক করতেই চিঠি দেয়া হয়। দুদকের এই চিঠি ডাকযোগে পাঠানো হয়। এর পরদিন ২৩ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায় চিঠি পায় এসবির সদর দফতর। এরপর সদর দফতর থেকে এসবির সব ইমিগ্রেশন ইউনিটকে ওইদিনই বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে মেইলে এই চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু চিঠি পাওয়ার দুই ঘণ্টা ৯ মিনিট আগেই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান পি কে হালদার।

পালানো পি কে হালদার নিয়ে হাইকোর্টের অসন্তোষ 

গ্রেফতার ও তার পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেয়ার পরও কীভাবে পি কে হালদার দেশত্যাগ করলেন তা নিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। পি কে হালদার যেদিন দেশত্যাগ করেন সেদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে কারা দায়িত্বরত ছিলেন তাদের নামের তালিকা দাখিল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজিপিকে নির্দেশ দেন আদালত। আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে এ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পি কে হালদারের পালানোর বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে মৌখিকভাবে তথ্য জানিয়েছে এসবির ইমিগ্রেশন ইউনিট।

দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, অনুসন্ধানের স্বার্থেই দুদক আগে থেকেই পদক্ষেপ নিয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে পি কে হালদার যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য দুদক এসবির মাধ্যমে ইমিগ্রেশনে চিঠি দেয়। কিন্তু পি কে হালদার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে যদি কারো কোনো গাফিলতি থাকে সেটা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, এসবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, দুদকের চিঠি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যান পি কে হালদার।

হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ গত বছরের ২১ অক্টোবর এক আদেশে দেশের বিমানবন্দরে পা রাখা মাত্রই পিকে হালদারকে গ্রেফতার করতে নির্দেশ দেন। এরপর পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়। এ নিয়ে ওই বছরের ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পরে সেটি আমলে নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় পি কে হালদারকে নিয়ে শুনানি অব্যাহত রয়েছে।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগটি এখন দুদকের তদন্তাধীন। এনিয়ে হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চে শুনানিও চলছে। এরইমধ্যে পি কে হালদারের কয়েকজন সহযোগী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

হাইকোর্ট থেকে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের পাসপোর্ট এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ রয়েছে। এরই মধ্যে পি কে হালদারের নামে থাকা কয়েক হাজার একর জমি জব্দেরও নির্দেশ দিয়েছেন নিম্ন আদালত।

দুদকের করা মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, রিলায়েন্স ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন পি কে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকা ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কৌশলে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি ও তার সহযোগীরা। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই ১৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে।

এফএইচ/জেডএইচ/জিকেএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।