দুদকের ভুলে সাজা : কামরুল ক্ষতিপূরণ চাইলে বিবেচনার নির্দেশ
দুদকের ভুল তদন্তের কারণে মামলায় জড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াখালীর নিরপরাধ কামরুল ইসলাম চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) কাছে ক্ষতিপূরণের চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করলে দুদককে সেটি বিবেচনা করতেও বলেছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
অযথা হয়রানির শিকার নোয়াখালীর কামরুল ইসলামের সাজা বাতিল করে দেয়ার পরে কামরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুদকের ভুলে এমন হয়রানির শিকার আর কেউ যেন না হয়। আমি মানসিকভাবে অনেক কষ্টে ছিলাম। অনেক টাকা পয়সাও খরচ হয়েছে। অপরাধ না করেও সাজার দণ্ড মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যে কত কষ্টের, তা বলে বোঝানো যাবে না।’
তার বিরুদ্ধে ১৫ বছরের সাজা উচ্চ আদালতে বাতিল হওয়ার পর রায়ের খবর শুনেই নোয়াখালীতে থাকা কামরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘হাইকোর্টের প্রতি আমি সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ। আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ। আইনজীবীকেও ধন্যবাদ জানাই, তিনি আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আমার মত এভাবে অযথা হয়রানির শিকার যেন আর কেউ না হয়, এটাই চাই।’
তিনি বলেন, ‘যেদিন শুনেছি পুলিশ আমাকে গ্রেফতারের জন্যে খুজঁছে, সেদিন থেকেই আমার ঘুম হারাম। কেন পুলিশ আমাকে খুঁজবে। অপরাধ না করেও কেন আমাকে সাজা দেবে। পরে সাজার রায় মাথায় নিয়েই আমি উচ্চ আদালতে গিয়েছি।’
দুদকের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায় দেখে আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরে সিদ্ধান্ত নেব।’
দুদকের সরল বিশ্বাসে ১০ বছর তদন্তে ভুল আসামির বিরুদ্ধে রায় দেন বিচারিক আদালত। ওই রায়ের পর বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন কামরুল ইসলাম। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে দুদকের কাছে ব্যাখ্যা চান। তদন্তে ভুল হয়েছে উল্লেখ করে দুদক আদালতের কাছে ভুল স্বীকার করে।
আদালত আজ বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা বাতিল করে রায় দেন। একইসঙ্গে এ মামলায় তদন্তকারির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। এছাড়া মামলাটি পুনঃতদন্ত করতে বলা হয়। নির্দোষ কামরুল ইসলামকে সাজা দিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ বিচারিক আদালতকে রিকল করতে বলেন। কামরুল ইসলাম ক্ষতিপূরণ চেয়ে কোনো আবেদন করলে দুদককে সেটি বিবেচনা করতেও বলেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট রায়ে বলেন, ‘যদি আবেদনকারী ক্ষতিপূরণের বিষয়ে দুদকে আবেদন করেন, তখন দুদক যেন বিবেচনা করে।’
আদালতে আজ দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী। অন্যদিকে রিট আবেদনকারী মোহাম্মদ কামরুলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী।
দুদকের ভুলে নিরপরাধ ব্যক্তির ভোগান্তি
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। ওই সাজা পরোয়ানার ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য কামরুল ইসলামেকে কোনো ধরনের হয়রানি ও গ্রেফতার না করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
কামরুল ইসলামেকে শনাক্তকরণ বিষয়ে দুদককে চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় দুদক ভুল স্বীকার করে আদালতে বক্তব্য দাখিল করেন।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, মামলার বাদী শহীদুল আলম এজাহারে অনিচ্ছাকৃত ভুলে অভিযুক্তের ক্ষেত্রে পশ্চিম রাজারামপুরের পরিবর্তে পূর্ব রাজারামপুর এবং তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাহফুজ ইকবাল অভিযোগপত্রে ভুলবশত অভিযুক্তের ক্ষেত্রে পশ্চিম রাজারামপুরের পরিবর্তে পূর্ব রাজারামপুর উল্লেখ করেন।
এফএইচ/ইএ/জেআইএম