পাপুলের স্ত্রী-মেয়ের নথি জালিয়াতির রায় ১১ ফেব্রুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২১

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী ও মেয়ের জামিন আবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি জালিয়াতির ঘটনায় জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও তার মেয়ে ওয়াফা ইসলামের জামিন আবেদনে দাখিল করা এক নথির প্রেক্ষিতে জারি করা সুয়োমোটো (স্বপ্রণোদিত) রুলের ওপর শুনানিতে সোমবার (২৫ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। জামিন আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন তানভীর পারভেজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একে এ ম আমিন উদ্দিন মানিক।

এদিকে, এর আগে এ মামলার শুনানিকালে পাপুলের স্ত্রী-মেয়েকে দায়মুক্তি দেয়া নথিতে আরেক তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মশিউর রহমানের স্বাক্ষর না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন আদালত। পরে আদালত এ সংক্রান্ত সব নথি তলব করে আদেশ দেন। সে আদেশের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দাখিল করা নথিতে পাপুলের স্ত্রী-মেয়ের জামিন আবেদনে নথি টেম্পারিং তথা জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে। আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি জালিয়াতির অভিযোগের ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করার দাবি তোলেন বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রপক্ষ এবং জামিন আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীরা।

পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলায় দাখিল করা ওই জামিন আবেদনের সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান স্বাক্ষরিত একটি নথি দাখিল করা হয়। ওই জামিন আবেদনে বলা হয়, এই নথি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে পেয়েছেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা আরেফিন আহসান আদালতকে জানান, তিনি এ জাতীয় কোনো কিছু লেখেননি।

এরপর এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে লিখিতভাবে হাইকোর্টকে জানানো হয়, তারা এ ধরনের কোনো নথি দেয়নি। এ অবস্থায় হাইকোর্টের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী সোমবার এ সংক্রান্ত নথি উপস্থাপন করে আদালতে বলেন, জামিন আবেদনে দেয়া নথির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নথির মিল নেই। জামিন আবেদনে যা দাখিল করা হয়েছে তা জালিয়াতি হয়েছে। এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তার তদন্ত হওয়া দরকার।

শুনানিতে জামিন আবেদনকারীর আইনজীবী বলেন, ওই নথি জালিয়াতি যদি হয়ে থাকে তাহলে এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত হওয়া দরকার। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ বিষয়ে তদন্ত চাওয়া হয়।

দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগে শহিদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় ২৬ নভেম্বর হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন তারা। তবে পাপুলের স্ত্রী ও মেয়ের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এই শুনানিতে নথি জালিয়াতির অভিযোগ আদালতের সামনে আসে।

জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ অনুসারে তারা আত্মসমর্পণ করে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত থেকে জামিন পান।

ওই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত উপায়ে শত শত কোটি টাকা অর্জন করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ইতোমধ্যে পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামসহ চারজনের ৬১৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ এবং ৯২টি তফসিলভুক্ত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

২০২০ সালের ৬ জুন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) শহিদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে সেখানে মানবপাচার ও অর্থপাচারের মামলা করেছে কুয়েত সিআইডি। এখন পাপুল কুয়েতে কারাবন্দি।

এফএইচ/এমএসএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।