পিকে হালদারের মাসহ ২৫ জনের তথ্য ইমিগ্রেশনে
৩৬শ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের ঘটনায় পিকে হালদারের মাসহ সন্দেহভাজন ২৫ ব্যক্তি যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশনকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে সরকার। চিঠিতে ওই ২৫ ব্যক্তির পরিচয় ও ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য ইমিগ্রেশনকে সরবরাহ করা হয়েছে।
পিকে হালদারের মাসহ ২৫ জনের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে ইমিগ্রেশনে। এর আগে তাদেরকে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১১ জানুয়ারি) পিকে হালদারের মতো তার পরিবারের সদস্য ও কাছের লোকজন যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্যই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একে এম আমিনউদ্দিন মানিক।
তিনি বলেন, তালিকায় নাম থাকা ওই ২৫ জনের কাছ থেকে পিকে হালদারের হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
যাদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা হাইকোর্টে
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, হারুনুর রশিদ (ফার্স্ট ফাইন্যান্স), পি কে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সামি হুদা, পি কে হালদারের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী, অবন্তিকা বড়াল, শামীমা (আইএলএফএসএল), রুনাই (আইএলএফএসএল), সাবেক সচিব ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান এন আই খান, সুকুমার মৃধা (ইনকাম ট্যাক্স আইনজীবী), অনিন্দিতা মৃধা, তপন দে, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, অভিজিৎ চৌধুরী, রাজিব সোম, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ, অঙ্গন মোহন রায়, নঙ্গ চৌ মং, নিজামুল আহসান, মানিক লাল সমাদ্দার, সোহেল সামস।
এছাড়া পিকে হালদারকে ‘বিভিন্নভাবে তথ্য দিয়ে সহায়তাকারী’ মাহবুব মুসা, এ কিউ সিদ্দিকী, মোয়াজ্জেম হোসেন ও পি কে হালদারের মা লিলাবতী হালদারের ক্ষেত্রেও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
ওই ২৫ জনের মধ্যে লীলাবতী হালদার, অমিতাভ অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারী, ইরফান উদ্দিন আহমেদ ও উজ্জ্বল কুমার নন্দীর পাসপোর্ট উচ্চ আদালতের নির্দেশে জব্দ আছে।
এর আগে গত ৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পিকে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করার আদেশ দেন।
স্বরাষ্ট্র সচিবকে এ নির্দেশ দিয়ে আদালত আদেশে বলেছেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো, যাতে তারা কোনোভাবেই দেশ ছাড়তে না পারেন। সেই সঙ্গে তদন্তের প্রয়োজনে আইন অনুসারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে।’ এর পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন উদ্যোগ নেন।
প্রায় ছয় হাজার গ্রাহকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করে বিদেশে পলাতক পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করার চেষ্টা করছে সরকার।
২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ পি কে হালদারসহ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) ২০ কর্মকর্তার পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।
এফএইচ/এমআরআর/জেআইএম