রাজাকাররা আল্লাদের বোন ও মঞ্জু মিয়ার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে
হবিগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়াসহ রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা রজব আলী ও আকল আলীকে গুলি করে হত্যা করে আল্লাদ মিয়ার বোন ও মঞ্জু মিয়ার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের পঞ্চম সাক্ষী খসরু মিয়া।
মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার হবিগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পঞ্চম সাক্ষী মো. খসরু মিয়া (৬৫) ও ষষ্ঠ সাক্ষী মো. শফিক আলী (৬১) ট্রাইব্যুনালে তাদের জবানবন্দী পেশ করেন।
মো.খসরু মিয়া বলেন , রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা রজব আলী ও আকল আলীকে গুলি করে হত্যা করেছে। আল্লাদ মিয়ার বোন ও মঞ্জু মিয়ার স্ত্রী তাদের হাতে ধর্ষিত হয়।
জবানবন্দী শেষে ৫ম সাক্ষীকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী । অন্যদিকে ষষ্ঠ সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হলেও জেরার জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ঠিক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। জবানবন্দী ও জেরার সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুনতাম মাহমুদ সিমন , রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে সাক্ষীকে জেরা করেন অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা ও অ্যাডভোকেট আব্দুস শুকুর।
৫ম সাক্ষী বলেন, একাত্তরের ২৬ অক্টোবর সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে এলাকায় হৈচৈ এর শব্দ শুনতে পাই। পরে জানতে পাই পাকিস্তানি আর্মিরা আমাদের এলাকায় চলে এসেছে। তখন আমি আমার অপর মামা আব্দুর রহিম (জেনারেল এ্মএ রবের ভাই) , তার স্ত্রী অরুনা বেগম,তার মা রাশিদা বেগম ,তার বোন ফিরোজা বেগমক ও তাদের বাড়ির কাজে একটি মেয়ে চাওর বিবিসহ আমাদের আমাদের মামার বাড়ির পাশ্ববর্তী একটি বাড়িতে চলে যাই।
সাক্ষী বলেন, তখন আমার মামা আব্দুর রহিম আমাকে বলেন যে ,তাদের বাড়িতে গিয়ে ঘরে তালা দিয়ে আসতে। আমি মামার বাড়িতে গিয়ে দেখতে পাই যে , তিনটি নৌকা আমার মামার বাড়ির দক্ষিণ দিকে পুকুর পাড়ে ভিড়ছে । ওই তিনটি নৌকাতে আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ,আসামি মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আসামি আব্দুর রাজ্জাক সহ আনুমানিক ১৫/১৬ জন পাকিস্তান আর্মি ও কয়েকজন রাজাকার ছিল। তখন একটি গুলির আওয়াজ শুনে আমি মামার বাড়ি উত্তর দিকে একটি ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়ি।
তিনি বলেন , তখন পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকাররা আমার মামা জেনারেল এমএ রবের বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে লুটপাট করে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পর মামার বাড়ির পাশ্ববর্তী হিন্দু পাড়াতেও আনুমনিক ১৫/১৬টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই আগুনে পুড়া ঘরের মধ্যে রমাকান্ত দেব ,বরীন্দ্র কান্ত দেব, মনিন্দ্র কান্ত দেব, উমাই দেব এর ঘরও ছিল।
আসামিসহ পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকারা সেখান থেকে এর পর একই গ্রামের ভিন্ন পাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমলা চেয়াম্যানের বাড়িতে যায়। সেখানে তারা কমলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন দেয়। বিভিন্ন লোকদের উপর নির্য়াতন করে।
উল্লেখিত ঘটনার ১৫ দিন পরে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও মুক্তিযোদ্ধা রজব আলীর বাড়িতে আসে। ওই দিন বিকেল আনুমানিক চারটা সাড়ে চারটার দিকে একটি গুলির শব্দ পাই । পরে জানতে পারি আসামি মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুল মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকসহ আরো কয়েকজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা রজব আলীকে আকল আলীর বাড়িতে গুলি করে হত্যা করে। এর পর রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা আকল আলীকে ধরে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।
সাক্ষী আরো বলেন ,এর পর আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকসহ পাকিস্তানি আর্মিরা একই গ্রামের আল্লাদ মিয়ার বাড়িতে যায়। সেখানে আল্লাদ মিয়ার বোন ও মঞ্জু মিয়ার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। এর পর তারা বিকেল তিনটার দিকে আমাদের গ্রাম ছেড়ে বানিয়াচং এর দিকে চলে যায়।
অপরদিকে প্রসিকিউশনের ষষ্ঠ সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন , আমার নাম মো. শফিক আলী , আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬১ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম – আগাউড়া এরালিয়া , থানা - বানিয়াচং ,জেলা – হবিগঞ্জ । আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছি। তিনি বলেন উল্লেখিথ তিন রাজাকার এলাকায় হত্যা ,ধর্ষণ নির্যাতন আটক অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।
এফএইচ/এসকেডি/আরআইপি