রাজন-রাকিব হত্যা মামলার রায়ের কপি হাইকোর্টে
সিলেটে নির্মমভাবে খুন হওয়া শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলা ও খুলনায় পৈশাচিক নির্যাতনে নিহত শিশু শ্রমিক রাকিব হত্যা মামলার রায়ের নথিপত্র (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে পৌঁছেছে।
আলোচিত এই দুই হত্যা মামলার রায়ের কপি মঙ্গলবার দুপুরের দিকে সংশ্লিষ্ট মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠানো হয় বলে জানান হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ।
নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের পূর্বে হাইকোর্টের অনুমতির প্রয়োজন হয়। ডেথরেফারেন্সের পাশাপাশি বিচারিক আদালতের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল দায়ের করে থাকেন।
এখন সরকার যদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করতে চায় তাহলে রেজিস্ট্রার কার্যালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে থাকে। যেমনটি নিয়েছে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলা ও সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ এস আলী হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের ক্ষেত্রে।
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বিচারিক আদালত ঘোষিত ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। আইনে বলা হয়, `দায়রা আদালত যখন মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন, তখন হাইকোর্ট বিভাগে কার্যক্রম পেশ করবেন এবং হাইকোর্ট বিভাগ তা অনুমোদন না করলে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।`
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৮ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করতে পারবে।যদি আসামি পক্ষ আপিল করে তাহলে সেই আপিলসহ ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হবে হাইকোর্টে।
গত ৮ নভেম্বর রোববার পৃথক পৃথকভাবে আলোচিত রাজন ও রাকিব হত্যা মামলার রায় দেন সিলেট ও খুলনার আদালত। এর মধ্যে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালত রাজন হত্যার দায়ে আসামি কামরুলসহ ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ১৩ আসামির মধ্যে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, তিনজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও দুই জনকে একবছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন। বাকি তিন জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন, মহানগরীর জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৪), চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫), তাজ উদ্দিন বাদল (২৮) ও পলাতক জাকির হোসেন পাভেল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ময়না চৌকিদারকে অপর দু’টি ধারায় পৃথক পৃথকভাবে সাত বছর ও এক বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। হত্যাকাণ্ডের ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর মিয়ার যাবজ্জীবন প্রদান করেন আদালত। সাত বছরের সাজা হয় কামরুলের দুই ভাই মুহিত আলম ও আলী হায়দার ওরফে আলী এবং পলাতক আসামি শামীম আহমদের। অপর দুই আসামি আয়াজ আলী ও দুলালকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে দশ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। অপরাধ সন্দেহজনকভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস পান ফিরোজ মিয়া, আজমত আলী ও রুহুল আমিন।
অন্যদিকে, খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা রাকিব হত্যার দায়ে দুই আসামির ফাঁসির আদেশ দেন। তিন আসামির অন্যজন খালাস পেয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জন হলেন : গ্যারেজ মালিক ওমর শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টু খান। শরীফের মা বিউটি বেগমকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
এফএইচ/আরএস/এসকেডি/পিআর