স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা: আপিলে মৃত্যুদণ্ড কমে আমৃত্যু কারাদণ্ড
যৌতুকের দাবিতে শরীরে কেরোসিন ঢেলে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে সাতক্ষীরার ইমাদুলের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
আপিল বিভাগের বরাত দিয়ে তিনি জানান, দণ্ডবিধির ৪৫ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেল আপিল ও অনিয়মিত আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার (১৮ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট এ বি এম বায়জিদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত জানান, এর আগে গত ১১ নভেম্বর ইমাদুলের জেল আপিল শুনানি করে মৃত্যুদণ্ড থেকে সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরে একই মামলার নিয়মিত আপিলের শুনানির জন্য গত রোববার (১৫ নভেম্বর) এই রায় প্রত্যাহার (রিকল) করেছিলেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ মামলায় পুনরায় আপিল শুনানির জন্য (১৭ নভেম্বর) দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। সে অনুযায়ী শুনানি শেষ করে আজ বুধবার রায় ঘোষণা করলেন আপিল বিভাগ।
জানা গেছে, ২০০২ সালের ১৯ জুলাই ইমাদুলের স্ত্রী রেশমা খাতুনকে নির্যাতন করে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এরপর রেশমাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওই বছর ২৯ জুলাই সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেশমার মৃত্যু হয়।
এর আগেই ২১ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে মৃত্যুর আগে জবানবন্দি দেন রেশমা। তবে নির্যাতন ও আগুন দিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় ওই দিনই (১৯ জুলাই) রেশমার স্বামী ইমাদুল, শ্বশুর শহিদুল সরদার, শাশুড়ি মোছা. ছবি বিবি ও দেবর রাজু আহমদকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন রেশমার বাবা আব্দুর রাজ্জাক। এরপর তদন্ত শেষে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সেখানকার পুলিশ।
বিচার শেষে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত ২০০৮ সালের ১১ আগস্ট এক রায়ে ইমাদুলকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অপর তিন আসামিকে খালাস দেয়া হয়। এরপর ইমাদুলের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে পাঠানো হয় ডেথ রেফারেন্স। একইসঙ্গে আপিল করেন কারাবন্দি ইমাদুল। হাইকোর্টে আবেদনের ওপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ইমাদুলের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ইমাদুল। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। সেই রায় প্রত্যাহার (রিকল) করার পর পুনরায় শুনানি শেষে আজ নির্ধারিত দিনে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।
এফএইচ/এআরএ/পিআর