পাঞ্জাব-লন্ডনে পড়েছেন সার্টিফিকেট কই : প্রধান বিচারপতি


প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ০২ নভেম্বর ২০১৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষী সমনের শুনানিতে তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের কাছে আসামির সার্টিফিকেটের কথা জানতে চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। শুনানিকালে তিনি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে পাঞ্জাব-লন্ডনে পড়েছেন সার্টিফিকেট কই?

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী সমন জারির আবেদন শুনানিতে সোমবার এমন মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।

আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনিতো পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন পড়েছেন বলছেন। কিন্তু এটার সার্টিফিকেট কই? পাবলিক বিশ্বাবিদ্যালয়ে পড়েছেন, কিন্তু সার্টিফিকেট নেই। একজন ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপকের সনদ দিয়েছেন। এটা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এটা হতে পারে না। আপনাদের এফিডেভিট ট্রাইব্যুনালে দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল তো গ্রহণ করেনি।’

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘আপনাদের বক্তব্য সঠিক এটা কিভাবে বুঝবো? আপনি (সাকা চৌধুরী) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ওই সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী দ্বারাও সমর্থিত হয়েছে। এখন এ পর্যায়ে এসে আপিন বলছেন- আপনি পাকিস্তানে ছিলেন। এটা কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।’

খন্দকার মাহবুব বলেন, ঘটনাস্থলে ছিলাম না এটা কনসিডার করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনিতো পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, পড়েছেন বলছেন। কিন্তু এটার সার্টিফিকেট কই। বেসরকারি নয় পাবলিক বিশ্বাবিদ্যালয়ে পড়েছেন কিন্তু সার্টিফিকেট নেই। একজন ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপকের সনদ দিয়েছেন। এটা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এটা হতে পারে না। আপনি লন্ডনে গেছেন। লিংকন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির কথা বলেছেন সাটিফিকের্ট কই। এত কাগজ দিলেন পাকিস্তান থেকে সাটির্ফিকেট আনতে পারলেন না। আপনি লন্ডন পাকিস্তান ওয়াশিংটনে গেছেন হাউ ফানি! সার্টিফিকেট কোথায়?’

তিনি আরো বলেন, ফজলুল কাদের চৌধুরীর তিন ছেলের মধ্যে দুই জনের বিরুদ্ধেতো কোনো মামলা হয়নি। আপনার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে। রায়ে সবকিছু বিবেচনা করা হয়েছে।

খন্দকার মাহবুব বলেন, সাক্ষী সরাসরি না হওয়ায় এফিডেভিট খারিজ করেছিলেন। এটাই শেষ সুযোগ। আমার এফিডেভিট পরীক্ষা করে দেখুন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখন রিভিউ পর্যায়ে এসে এসব তথ্য উপাত্ত বা আবেদন নেয়ার স্কোপ কম। সুযোগ নেই। স্যরি।’

তখন সাকার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তাহলে তাদের (বিদেশি সাক্ষী) ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড গ্রহণ করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন,  ‘স্যরি’।

পরে আপিল বিভাগ সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে ৫ পাকিস্থানিসহ ৮ জনের আবেদন খারিজ করে দেন।

এরপর সাফাই সাক্ষীদের সমনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে আগামী ১৭ নভেম্বর সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের শুনানির দিন নির্ধারণ করেন সর্বোচ্চ আদালত।

আবেদনের শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, সাকার বিদেশি সাক্ষী আনার আবেদন নাকচ করেছেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে সাক্ষীর জবানবন্দি সম্বলিত ভিডিও রেকর্ড আদালতে উপস্থাপন করার জন্য করা আবেদনও খারিজ করেছেন।

কারণ একই ধরনের সাক্ষী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এবং আপিলে দেওয়া হয়েছিল আদালত তা গ্রহণ করেন নি। সাকা যদি ৭১ সালে বিদেশে থাকতো তাহলে পত্রিকায় সংবাদ হলো কেন। ৭২ সালে মামলা হলো কেন? তিনি বলেন, ঘটনার পারে সাকা বিদেশে চলে যায় ৭৪ সালে দেশে ফিরে আসেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপনি (সাকা চৌধুরী) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ওই সময়ের (মুক্তিযুদ্ধের সময়) সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। প্রসিকিউশনের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী দ্বারাও সমর্থিত হয়েছে। এখন এ পর্যায়ে এসে আপনি বলছেন, আপনি পাকিস্তানে ছিলেন। এটা কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপনি লন্ডন, পাকিস্তান ও ওয়াশিংটনে গেছেন। হাউ ফানি! সার্টিফিকেট কোথায়? এখন রিভিউ পর্যায়ে এসে এসব তথ্য-উপাত্ত বা আবেদন নেওয়ার স্কোপ কম।

এফএইচ/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।