তথ্য ‘যাচাই’ শেষে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি মামলার চার্জশিট
বুড়িগঙ্গা নদীতে দেড় মাস আগে লঞ্চডুবির ঘটনায় করা মামলায় এখনো চার্জশিট দাখিল করেনি পুলিশ। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনার পর আট আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তথ্য ‘যাচাই-বাছাই’ শেষে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
গত ২৯ জুন সকাল ৯টার দিকে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা দোতলা ‘মর্নিং বার্ড’ লঞ্চ ঢাকার নৌবন্দর সদরঘাট কাঠপট্টি ঘাটে ভেড়ানোর আগমুহূর্তে সেটিকে ধাক্কা দেয় চাঁদপুরগামী লঞ্চ ময়ূর-২। সঙ্গে সঙ্গে ‘মর্নিং বার্ড’ ডুবে যায়। লঞ্চডুবির ওই ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ‘মর্নিং বার্ড’কে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়ার সময় ‘ময়ূর-২’ এর মূল মাস্টার নয় এমন একজন শিক্ষানবিশ চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। লঞ্চের কোনো ত্রুটি নয়, মাস্টারের ভুলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দুর্ঘটনার পর অবহেলাজনিত মৃত্যু এবং বেপরোয়া জাহাজ চালানোর অভিযোগে নৌ-পুলিশ সদরঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শামসুল একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় দণ্ডবিধি ২৮০, ৩০৪ (ক) ও ৪৩৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। মামলার এজহারনামীয় সাত আসামিসহ আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন- এমভি ময়ূর-২ এর মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদ, লঞ্চের মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা ও সহকারী মাস্টার জাকির হোসেন, চালক শিপন হাওলাদার ও শাকিল হোসেন, সুপারভাইজার আব্দুস সালাম, সুকানি নাসির মৃধা ও গ্রিজার মো. হৃদয়। এদের মধ্যে ময়ূর-২ এর মালিক মোসাদ্দেক হানিফের জামিনে আছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৭ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
নৌ-পুলিশ সদরঘাট থানার অফিসার্স ইনচার্জ গোলাম মোরশেদ তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, মামলার পর আট আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেককে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আবার অনেকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে আদালতে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেন, বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।মামলায় আট আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত মামলাটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করবে তদন্ত সংস্থা। চার্জশিট দাখিল হলে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি যেন নিশ্চিত হয় যেদিকে খেয়াল রাখবে রাষ্ট্রপক্ষ।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে দশ বছরের কারাদণ্ড
লঞ্চডুবির ওই ঘটনায় করা মামলায় বেপরোয়া লঞ্চ চালিয়ে মানুষ হত্যা ও ধাক্কা দিয়ে লঞ্চ দুর্ঘটনার জন্য দণ্ডবিধি ২৮০, ৩০৪ (ক), ৪৩৭ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। ধারাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে ৪৩৭ ধারায়।
ধারা অনুযায়ী শাস্তি
ধারা ৩০৪ (ক) : অবহেলার ফলে ঘটিত মৃত্যু
কোনো ব্যক্তি যদি বেপরোয়াভাবে বা অবহেলাজনিতভাবে কার্য করে কারও মৃত্যু ঘটায় এবং তা শাস্তিযোগ্য নরহত্যা না হয়, তবে সে ব্যক্তি পাঁচ বৎসর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।
ধারা ২৮০ : বেপরোয়া জাহাজ চালানো
কোনো ব্যক্তি যদি এমন বেপরোয়াভাবে বা অবহেলার সাথে কোনো নৌযান চালনা করে, যার কারণে কোনো মানুষের জীবন বিপদাপন্ন হয় অথবা অপর কোনো ব্যক্তির আঘাত লাগার বা জখম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তবে সে ব্যক্তি ছয় মাস পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত যে কোনো পরিমাণের অর্থদণ্ডে, অথবা উভয়দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
ধারা ৪৩৭ : পাটাতনবিশিষ্ট জাহাজ বা বিশ টন পরিমাণ ভারবাহী জাহাজে আঘাত
কোনো ব্যক্তি যদি পাটাতনবিশিষ্ট জলযান অথবা কুড়ি টন বা তদূর্ধ্ব ওজনের বোঝাবিশিষ্ট কোনো জলযান ধ্বংস করার বা উহাকে বিপজ্জনক করে দেয়ার অভিপ্রায়ে বা তদ্বারা উহাকে ধ্বংস করতে বা বিপদজনক করে দিতে পারে বলে জানা সত্ত্বেও অনুরূপ পাটাতনবিশিষ্ট জলযানের অথবা কুড়ি টন বা তদূর্ধ্ব ওজনের কোনো জলযানের অনিষ্টসাধন করে, তবে উক্ত ব্যক্তি ১০ বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
জেএ/এইচএ/পিআর