দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা : প্রধান বিচারপতি
সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা দেয়ার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘ঢালাও নয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিন। দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এ জন্য বার ও বেঞ্চকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’
শনিবার (৮ আগস্ট) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠককালে এ আশ্বাস দেন প্রধান বিচারপতি। বৈঠকে আপিল বিভাগের সব বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অংশ নেন।
বৈঠকে আইনজীবী সমিতির নেতারা প্রধান বিচারপতিকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের থেকে আদেশের অনুলিপি পেতে বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণ। আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি বড় অংশের লোভের কারণে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের হতাশা বাড়ছে। বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে দুর্নীতির এই ভয়ালগ্রাস থেকে বিচারপ্রার্থী জনগণকে বাঁচাতে আপনাকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেই হবে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও আইনজীবী সমিতির সদস্যদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা দরকার।’
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ই-ফাইলিং চালু হলে এ সমস্যা অনেকটাই নিরসন হবে।’
তিনি বলেন, ‘বেঞ্চ অফিসাররা একই বেঞ্চে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তাদের বদলি করা হয় না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে বেঞ্চ অফিসারদের একই বেঞ্চে দীর্ঘদিন না রেখে অন্য বেঞ্চে বদলি করব।’
আইনজীবী সমিতির নেতারা প্রধান বিচারপতিকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেবে, তাতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’
বৈঠকে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ছাড়াও আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন, সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, কোষাধ্যক্ষ রাগীব রউফ চৌধুরী, সহ-সম্পাদক বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ অংশ নেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, হাইকোর্টে শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারকাজ চালুর সিদ্ধান্ত হলেও আপিল বিভাগের বিচারকাজ আপাতত ভার্চুয়ালি পরিচালনা করা হবে বলে প্রধান বিচারপতি সমিতির নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছেন। বৈঠকে চলতি সপ্তাহ থেকে হাইকোর্টে শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারকাজ চলার বিষয়ে আইনজীবীদের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, ‘শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু হলে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
এদিকে বৈঠক শুরুর আগে উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে চলমান দুর্নীতি, অনিয়ম ও নানা ধরনের অসঙ্গতি নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দুর্নীতিবিরোধী সাধারণ আইনজীবীদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে স্মারকলিপি দেয়া হয়।
এফএইচ/বিএ/এমএস