লিখিত-ভাইভা ছাড়া সনদের দাবিতে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বিক্ষোভ
সনদের দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ) পরীক্ষায় ২০১৭ এবং ২০২০ সালে উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশরা। এই দুই পরীক্ষার লিখিত ও ভাইভা গ্রহণ না করে শুধু প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ভিত্তিতে আইনজীবী হিসেবে গেজেট প্রকাশের দাবি তুলেছেন তারা।
রোববার (১৯ জুলাই) রাজধানীর বাংলামোটরে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সনদ পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে-এমন আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় এখনই সনদ পেতে চাইছেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা।
তারা বলছেন, আগে একটি ধাপে ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) পরীক্ষা নিয়ে সনদ দেয়া হতো। পরে আইন সংশোধনের মাধ্যমে তিনটি ধাপ করা হয়। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর ফলাফলের ভিত্তিতে সনদ দেয়া হয়।
এর আগে গত ৬ জুন বার কাউন্সিল ও আইন মন্ত্রণালয়ে, ৯ জুন দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা। এর মধ্যে ৭ জুন বার কাউন্সিল অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন এবং ৩০ জুন সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেন তারা। পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সামনে অনশন কর্মসূচি পালন শেষে বার কাউন্সিলের অফিসের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তারা।
রোববার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বাংলামোটরে বার কাউন্সিলের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় কাফনের কাপড় পরে অনেক শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
গত ৮ জুলাই থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনে যান তারা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দীর্ঘ পাঁচ বছরে একটি মাত্র এনরোলমেন্ট পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ায় এবং বর্তমান করোনা ভয়াবহতার কারণে শিক্ষানবিশ তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে ১২ হাজার ৮৪৮ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। এছাড়া ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষানবিশ আইনজীবী পরবর্তী প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন।
আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষানবিশ বলেন, আমরা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তকরণ এনরোলমেন্ট প্রক্রিয়ার প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০১৭ সালের ২১ জুলাই এবং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তীর্ণ হই। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর বার কাউন্সিল কর্তৃক এনরোলমেন্ট পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কোনো পরীক্ষা হয়নি। তবে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী তালিকাভুক্তকরণ পরীক্ষার প্রিলিমিনারি সম্পন্ন হওয়ার পর বর্তমান করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারির কারণে লিখিত পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে যায়। এমন অবস্থায় শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বিষয় মানবিকভাবে বিবেচনা করে লিখিত পরীক্ষা মওকুফ করে অথবা লিখিত ও ভাইভা উভয় পরীক্ষা মওকুফ করে ২০১৭ ও ২০২০ সালে এমসিকিউ উত্তীর্ণদের গেজেট প্রকাশ করে সনদের প্রদানের জন্য দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে শিক্ষানবিশ আইনজীবী আইনুল ইসলাম বিশাল বলেন, আইন অনুযায়ী গেজেট বা প্রজ্ঞাপন দ্বারা ২০১৭ ও ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণদের সনদ প্রদান করতে কোনো বাধা নেই।
শিক্ষানবিশ আইনজীবী সুমনা আক্তার লিলি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আইনের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু আজ আমরা জাতির পিতার বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তিন বছর একটি পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছি। বার কাউন্সিলের বর্তমান কমিটি যেহেতু এখন পর্যন্ত কোনো এনরোলমেন্ট পরীক্ষা পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারেনি এবং বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লিখিত পরীক্ষা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনিশ্চিত, সেহেতু ২০১৭ ও ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণদের লিখিত ও ভাইভা মওকুফ করে গেজেট প্রকাশ করে ২০২০ সালেই সনদ প্রদান করা হোক।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির শিক্ষানবিশ আইনজীবী বোনা আসাদ বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায় ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর হলে আজকে আইজীবী থাকতাম ইনশাল্লাহ। দীর্ঘ ৩ বছর পর এমসিকিউ পরীক্ষা এবং বৈশ্বিক মহামারির কবলে পড়ে এই বছরে আদৌ লিখিত পরীক্ষা হবে কি-না, তা এখন সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত।’
তিনি বলেন, ‘প্রিলিমিনারি পাস করেছি চার মাস হয়ে গেছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে রিটেন কবে হবে আর তার রেজাল্ট কবে পাব আর কবে হবে সনদ? বার কাউন্সিলের বিজ্ঞ এনরোলমেন্ট কমিটির কাছে বিনীত অনুরোধ, এমসিকিউ উত্তীর্ণদের গেজেট প্রকাশ করে সনদ দিয়ে ২০২০ সাল থেকেই আপিল বিভাগের নির্দেশনা কার্যকর করে আমাদের বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিন।’
এফএইচ/এসআর/এমকেএইচ