আদালতের হাজতে রাখা হয়েছে ডা. সাবরিনাকে
করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের হাজত খানায় রাখা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। হাজতের কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, তেজগাঁও থানার প্রতারণা মামলায় ফের তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করবে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ। ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমানের আদালতে দুপুরে তার রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে ।
এর আগে ১৩ জুলাই সাবরিনাকে আদালতে হাজির করে চারদিনের রিমান্ডে চেয়েছিল পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১২ জুলাই দুপুরে আলোচিত চিকিৎসক সাবরিনাকে তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার অভিযোগে তেজগাঁও থানার করা মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ।
যেভাবে এলো ডা. সাবরিনার নাম
গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ২২ জুন জেকেজির সাবেক গ্রাফিক্স ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে আটক করে পুলিশ। হিরু আমাদের জানায়, তিনি ভুয়া করোনা সার্টিফিকেটের ডিজাইন তৈরি করতেন। তিনি স্বীকার করেন, কোর্টেও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন যে, ভুয়া রিপোর্টের সাথে জেকেজি গ্রুপের লোকজন জড়িত।
ডিসি হারুন বলেন, তখন জেকেজির সিইও আরিফুলসহ চারজনকে আটক করি। গ্রেফতার সিইওকে আমরা জিজ্ঞেস করি, ‘এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কে?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী।’ এরপর একে একে ছয়জনই এক উত্তর দিলেন।
সূত্র আরও জানায়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল সাবরিনা-আরিফ দম্পতির জেকেজি প্রতিষ্ঠান। নমুনা সংগ্রহের জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ দেয়া ছিল। তাদের হটলাইন নম্বরে রোগীরা ফোন দিলে মাঠকর্মীরা বাড়ি গিয়েও নমুনা সংগ্রহ করতেন। আবার অনেককে জেকেজির বুথের ঠিকানা দেয়া হতো। এভাবে কর্মীরা প্রতিদিন গড়ে ৫০০ মানুষের নমুনা সংগ্রহ করত।
পরে তাদের গুলশানের একটি ভবনের ১৫ তলার অফিসের একটি ল্যাপটপ থেকে ভুয়া সনদ দেয়া হতো। ওই ল্যাপটপ থেকে জেকেজির কর্মীরা রাতদিন শুধু জাল রিপোর্ট তৈরির কাজ করতেন। প্রতিটি সনদের জন্য নেয়া হতো পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিদেশিদের কাছ থেকে নেয়া হতো ১০০ ডলার। যদিও শর্ত ছিল বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহ করে সরকার নির্ধারিত ল্যাবে পাঠাতে হবে। কিন্তু তারা সব ধরনের শর্তভঙ্গ করে পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দিতো।
এদিকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ডা. সাবরিনাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত রোববার (১২ জুলাই) মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ জারি করা হয়।
জেএ/এমএসএইচ/এমএস