২৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা : ব্যবসায়িক পার্টনারের জবানবন্দি
২৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার দায় স্বীকার করেছেন ব্যবসায়িক পার্টনার জাহিদুল ইসলাম রিপন। ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। রিপনের ভাগ্নে অহিদুর রহমান মিলন (২৬) ও খালা শাশুড়ির ছেলে আমিনুল ইসলামের (৩৫) জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (২৮ জুন) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, শনিবার তাদের তিনজনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এসময় রিপন সেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অপরদিকে মিলন ও আমিনুলকে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে তাদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
গত ২৩ জুন ব্যাংক থেকে ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেন ব্যবসায়ী মিঠু। সেখান থেকে তিনি এক লাখ টাকা পাওনাদারকে দেন। বাকি ২৪ লাখ টাকা দোকানের টেবিলের নিচে রেখে জোহরের নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষে এসে দেখেন টাকাও নেই, ব্যবসায়িক পার্টনার রিপনও লাপাত্তা।
গত ২৩ জুনের ওই ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন মিঠু। মামলা নম্বর ১৬। ওই মামলায় তিনি সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে পার্টনারের নাম উল্লেখ করেন।
টাকা চুরির পর ঘন ঘন অবস্থান বদলানোয় রিপনকে ধরতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। অবশেষে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে খুলনা থেকে জাহিদুল ইসলাম রিপনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার অন্যরা হলেন, রিপনের ভাগ্নে অহিদুর রহমান মিলন (২৬) ও খালা শাশুড়ির ছেলে আমিনুল ইসলাম (৩৫)।
কোতোয়ালি পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে রিপনসহ গ্রেফতার তিনজনই টাকা চুরির কথা স্বীকার করেছেন এবং চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জুন) রাতে কোতোয়ালি জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল আলম মুজাহিদ জাগো নিউজকে বলেন, গত ২৩ জুন ব্যাংক থেকে তোলা ২৫ লাখের এক লাখ টাকা তিনি একজন পাওনাদারকে পরিশোধ করেন। বাকি ২৪ লাখ টাকা ব্যবসায়িক পার্টনার জাহিদুল ইসলাম রিপন ও দোকানের কর্মী ইমরানের জিম্মায় রেখে জোহরের নামাজ পড়তে যান।
ফিরে এসে জানতে পারেন, দোকানের কর্মচারী ইমরানকে চা আনতে পাঠিয়ে পার্টনার রিপন ২৪ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও রিপনের সন্ধান না পেয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তিনি।
কোতোয়ালি থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সাইফুল আলম বলেন, মামলার পর পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার এবং চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারে তৎপর হন। তবে আসামি ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করায় প্রথমে পুলিশের নানা কৌশল কাজে আসছিল না। কিন্তু পুলিশ না থেমে উদ্যমী হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।
টানা দুইদিনের চেষ্টার পর আসামির সর্বশেষ অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ পৌঁছে যান খুলনায়। আসামি রিপনকে আটক করা হয় কিন্তু তিনি টাকা চুরির কথা স্বীকার করেননি। তবে পুলিশ টাকা চুরির ঘটনায় রিপনের সংশ্লিষ্টতা শতভাগ নিশ্চিতের পর রিপনের খালা শাশুড়ির ছেলে আমিনুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর সব কিছু স্বীকার করে রিপন। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খালা শাশুড়ির বাসা থেকে চুরি যাওয়া ২৪ লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
টাকা চুরির পরিকল্পনা সম্পর্কে রিপন পুলিশকে জানায়, ২৪ লাখ টাকা চুরির পর রিপন কয়েকটি স্থান বদলে খুলনায় আশ্রয় নেন। সেখানে ভাগ্নে মিলনকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন যে রিপন আর ঢাকায় ফিরবেন না। খুলনাতেই বাসা ভাড়া নেয়। ওই ভাড়া বাসায় থেকে চোরাই টাকায় নতুন করে তারা ব্যবসা করবে। মূলত চুরি যাওয়া টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনায় জড়িত থাকায় ভাগ্নে মিলনকে গ্রেফতার করা হয়।
জেএ/এমএফ/এমকেএইচ